কল্যাণকর রাষ্ট্র চাইলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণের জন্য অটোপাস পদ্ধতি বাদ দিতে হবে বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার ভাষ্য, রাজনীতি হোক কিংবা শিক্ষা হোক, অটোপাস জাতিকে ধ্বংস করবে।
শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ভিআইপি লাউঞ্জে ‘করোনাকালীন পরীক্ষায় অটোপাস: শিক্ষার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা কল্যাণকর রাষ্ট্র চাচ্ছি। এখানে পরীক্ষা দিয়েই এগোতে হবে। রাজনীতির ক্ষেত্রে পূর্বে ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিয়ে এগোতে হতো। এখন সেটা নেই। আর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন নেয়া যাবে না? করোনা হবে? স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন উপায়ে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো সহজেই করতে পারি। এই অটো পাস দিয়ে আমরা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছি। রাজনৈতিক উত্থান স্তব্ধ করে দিচ্ছি। এই পরিবর্তনটা খুবই জরুরি।’
করোনার প্রভাব আছে তবুও স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার কোনো কারণ নেই বলেও জানান তিনি।
প্রতিবছর নতুন বই ছাপানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একই বই দ্বিতীয় বছর কেন ব্যবহার করা যাবে না? প্রতিবছর কেন নতুন বই ছাপাতে হবে? সেক্ষেত্রে দু’চারটা বই পরিবর্তন হতে পারে।’ এছাড়া বইয়ে বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে এক কাহিনিতেই ফোকাস না করে সেখানেও পরিবর্তন আনার বিষয়ে বলেন তিনি।
জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ইসলাম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ
ধর্ষণকাণ্ডের ফাঁসির ব্যবস্থা নেয়া ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফাঁসি মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা। সামগ্রিকভাবে চিন্তা করে কাজ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে হবে।’
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, সরকার অটোপাসে আসতে পারে। সংসদ সদস্যরাও অটোপাসে আসতে পারে। তবে শিক্ষায় অটোপাস চলবে না। ৭২’এর গ্লানি মুছতে না মুছতেই করোনায় আবার অটোপাসের গ্লানি মেনে নিতে পারছি না।’ এছাড়াও শিক্ষাব্যবস্থায় এই অটোপাস দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পদ্ধতি নির্ধারণ না করে তা দেয়া ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের উচ্চতর শিক্ষার পছন্দ নির্ধারণের বিষয়টি যুক্ত। যদি এই অটোপাস বহাল থাকে তাহলে ২০২০ শিক্ষার্থীরা যারা এইচএসসি পাস করল তারা করুণায় পাস বলে একটা গ্লানি বয়ে বেড়াবে। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও তুলে ধরা যায়- এভাবে ২০২০ সালে যারা এইচএসসি পাস করল তারা করোনার বরপুত্র। এর মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়ে মেডিকেল, প্রকৌশল এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে চাকরি ক্ষেত্রে সবখানে এগিয়ে থাকল নিরাপদ দূরত্বে। প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী ফেল করার কথা ছিল, তারা বিনাযুদ্ধে পার হয়ে গেল বাধার প্রাচীর । এদের কেউ সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হবে। চার থেকে পাঁচ বছর পর গ্রাজুয়েট হয়ে বের হবে। তখন রাষ্ট্র এই শিক্ষিত যুবকদের কোথায় কাজে লাগায় সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকল জাতি।’
সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই) চেয়ারম্যান ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক উপমন্ত্রী অ্যডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাবির সাবেক ভিসি ড. মুসলেহ উদ্দিন, সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সাবেক ভিসি ড খলিলুর রহমান, ড. আমিনুর রহমান পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ওবায়দুল হক, কবি আবদুল হাই শিকদার, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়াসহ অন্যরা।