জেলা প্রতিনিধিঃ আজ ১৭ই এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যায় মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকানন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস অনেক জাঁকজঁমকভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। কিন্তু করোনার কারণে এবারও সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। গণপূর্ত বিভাগ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ধোঁয়া-মোছা, মুজিবনগর আমবাগান পরিস্কার করার কাজ শেষ করেছে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দিবসটি উপলক্ষে এবার সকাল ৬টায় মুজিবনগর পুলিশের আয়োজনে ৩১ বার তোপধ্বনি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মুনসুর আলম খাঁন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন জাতীয় সংসদের হুইপ জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। পরে সন্ধ্যায় মুজিবনগরে বর্ণিল আঁতশবাজির আয়োজন করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরিহ বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়।
তৎকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৭ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে বেশ জোরালো সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। স্বল্প সময়ে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
এসময় তাজউদ্দিন আহমেদ অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ আইন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ মনসুর আলী অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ১১ এপ্রিল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণ দেন। যে ভাষণ একাধিকবার আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার জন্য একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। তাজউদ্দিন আহমেদের ভাষণের মধ্যদিয়েই তা দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে।
অনেক বাধা-বিপত্তি পার করে ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুজিবনগর থেকেই বাঙালি জাতির সত্যিকরের অভিযাত্রা শুরু বাংলাদেশ অভিমুখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বর্ণাঢ্য ইতিহাসে তাই মুজিবনগর হয়ে আছে উজ্জ্বলতম এক বাতিঘর।