ঢাকা ০৬:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আসামি দেলোয়ারের সঙ্গে ছবি নিয়ে যা বললেন এসপি জসিম

News Editor
  • আপডেট সময় : ০২:৫৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০
  • / ১০৭০ বার পড়া হয়েছে

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাশপুরে এক নারীকে গণধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতারের পর র‍্যাব কর্মকর্তা এএসপি নাজমুলের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-১১ এর এডিশনাল এসপি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- এএসপি নাজমুল, আমার প্রিয় সহকর্মী। র‍্যাব-১১ আমার দ্বিতীয় কর্মস্থল আর তার প্রথম। আমার সঙ্গেই তার কর্মজীবন শুরু। অনেক দুঃসাহসিক অভিযানে আমার সহযোদ্ধা। ইতোমধ্যে বদলি হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর হয়তো নারায়ণগঞ্জ  ছেড়ে চলে যাবে। নিজের কথা নয়, তার কথা বলছি। দায়িত্ব নিয়েই বলছি। র‍্যাবের কর্মজীবনে এক বিন্দু অনিয়ম সে করেনি। তার তোলা আসামির সঙ্গে আমাদের ছবি নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। তাতে দুঃখ নেই। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে বিনীত অনুরোধ, মর্মাহত হোন, তবে বিস্তারিত জেনে হোন।

সিনহা হত্যা : কনস্টেবল রুবেলকে কারাগারে প্রেরণ

আপনারা জানেন, নোয়াখালীর এখলাশপুরে সংঘটিত নারীর প্রতি বীভৎস ও লোমহর্ষক যৌন হয়রানির ভিডিও প্রকাশের পর দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নৃশংস ঘটনায় যে কোনো মানবিক মানুষের মতো আমাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়েছে। নোয়াখালী জেলা র‍্যাব-১১ এর অধিক্ষত্রে হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করি।

সেদিন মধ্যরাতে গোপন সূত্রে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার নোয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। কিন্তু তার ব্যবহৃত মোবাইল টি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার বীভৎসতা ও নৃশংসতা বিবেচনা করে আমাদের অভিযানের প্রতিটি সদস্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে শত কষ্ট মেনে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মত দেশের ব্যস্ততম পথে চেকপোস্ট বসিয়ে বাস তল্লাসি শুরু করি। একজন এডিশনাল এসপি ও একজন এএসপির নেতৃত্বে প্রায় ৩ ঘণ্টা বাস তল্লাশি করে রাত আনুমানিক ২টা ৩০ ঘটিকায় সন্ত্রাসী দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। (ছবিতে একজন অফিসারে গায়ে রিফ্লেক্টিং ভেস্ট দেখুন) প্রত্যেকটি ক্লান্তিকর ও কষ্টসাধ্য অভিযানের পর সফলতা আসলে আমাদের সকল শ্রম, শত কষ্ট নিমিষেই হারিয়ে যায়।

আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল, অভিযুক্ত দেলোয়ার ঢাকায় গিয়ে প্রধান আসামি বাদলের সঙ্গে দেখা করবে। তাই আমাদেরও প্রধান টার্গেট বাদল। কিন্তু দেলোয়ারের সহযোগিতা ছাড়া ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা বাদলকে গ্রেফতার কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। এদিকে আমাদের হাতে আটক দেলোয়ার যখন জানতে পারল আমরা র‍্যাবের সদস্য, তখন সে মৃত্যু ভয়ে কাঁপছে। তাছাড়া আমাদের দুজন জুনিয়রের আগ্রাসী আচরণে সে আরো ভীত হয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিল না। তখন আমরা দেলোয়ার কে পেছন থেকে সামনের সিটে এনে আমাদের মাঝখানে বসাই। গাড়ি তখন ঢাকার দিকে। বাদলের অবস্থান জানার জন্য তার সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার আলোকে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করা হয়। দেলোয়ার বিশ্বাস করতে পারছিল না সে বেঁচে থাকবে। আমরা তার আস্থা অর্জনের জন্য চলন্ত গাড়িতে যা কিছু বলা যায়, কিংবা করা যায়, তাই করেছি। তার মধ্যে এই ছবি তোলাও একটি। এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি।

র‍্যাব-১১ এর কর্মজীবনে এর চেয়ে বহু দুঃসাহসিক অভিযান আমরা করেছি। নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। ভবিষ্যতেও তাই করে যাব। সামগ্রিক ৮ ঘণ্টা অভিযানের মধ্যে নেয়া আসামির সঙ্গে একটি ছবি আপনার মনে আঘাত দিয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

রোববার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড তাজা গুলিসহ দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। সোমবার সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জে দেলোয়ারের মাছের খামারে অভিযান চালিয়ে সাতটি তাজা ককটেল ও বন্দুকের দুটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরক ও গুলি উদ্ধার ঘটনায় দেলোয়ারের রিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা হয়।

আসামি দেলোয়ারের সঙ্গে ছবি নিয়ে যা বললেন এসপি জসিম

আপডেট সময় : ০২:৫৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০২০

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাশপুরে এক নারীকে গণধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতারের পর র‍্যাব কর্মকর্তা এএসপি নাজমুলের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-১১ এর এডিশনাল এসপি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- এএসপি নাজমুল, আমার প্রিয় সহকর্মী। র‍্যাব-১১ আমার দ্বিতীয় কর্মস্থল আর তার প্রথম। আমার সঙ্গেই তার কর্মজীবন শুরু। অনেক দুঃসাহসিক অভিযানে আমার সহযোদ্ধা। ইতোমধ্যে বদলি হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর হয়তো নারায়ণগঞ্জ  ছেড়ে চলে যাবে। নিজের কথা নয়, তার কথা বলছি। দায়িত্ব নিয়েই বলছি। র‍্যাবের কর্মজীবনে এক বিন্দু অনিয়ম সে করেনি। তার তোলা আসামির সঙ্গে আমাদের ছবি নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। তাতে দুঃখ নেই। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে বিনীত অনুরোধ, মর্মাহত হোন, তবে বিস্তারিত জেনে হোন।

সিনহা হত্যা : কনস্টেবল রুবেলকে কারাগারে প্রেরণ

আপনারা জানেন, নোয়াখালীর এখলাশপুরে সংঘটিত নারীর প্রতি বীভৎস ও লোমহর্ষক যৌন হয়রানির ভিডিও প্রকাশের পর দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নৃশংস ঘটনায় যে কোনো মানবিক মানুষের মতো আমাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়েছে। নোয়াখালী জেলা র‍্যাব-১১ এর অধিক্ষত্রে হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করি।

সেদিন মধ্যরাতে গোপন সূত্রে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার নোয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। কিন্তু তার ব্যবহৃত মোবাইল টি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার বীভৎসতা ও নৃশংসতা বিবেচনা করে আমাদের অভিযানের প্রতিটি সদস্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে শত কষ্ট মেনে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মত দেশের ব্যস্ততম পথে চেকপোস্ট বসিয়ে বাস তল্লাসি শুরু করি। একজন এডিশনাল এসপি ও একজন এএসপির নেতৃত্বে প্রায় ৩ ঘণ্টা বাস তল্লাশি করে রাত আনুমানিক ২টা ৩০ ঘটিকায় সন্ত্রাসী দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। (ছবিতে একজন অফিসারে গায়ে রিফ্লেক্টিং ভেস্ট দেখুন) প্রত্যেকটি ক্লান্তিকর ও কষ্টসাধ্য অভিযানের পর সফলতা আসলে আমাদের সকল শ্রম, শত কষ্ট নিমিষেই হারিয়ে যায়।

আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল, অভিযুক্ত দেলোয়ার ঢাকায় গিয়ে প্রধান আসামি বাদলের সঙ্গে দেখা করবে। তাই আমাদেরও প্রধান টার্গেট বাদল। কিন্তু দেলোয়ারের সহযোগিতা ছাড়া ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা বাদলকে গ্রেফতার কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। এদিকে আমাদের হাতে আটক দেলোয়ার যখন জানতে পারল আমরা র‍্যাবের সদস্য, তখন সে মৃত্যু ভয়ে কাঁপছে। তাছাড়া আমাদের দুজন জুনিয়রের আগ্রাসী আচরণে সে আরো ভীত হয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিল না। তখন আমরা দেলোয়ার কে পেছন থেকে সামনের সিটে এনে আমাদের মাঝখানে বসাই। গাড়ি তখন ঢাকার দিকে। বাদলের অবস্থান জানার জন্য তার সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার আলোকে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করা হয়। দেলোয়ার বিশ্বাস করতে পারছিল না সে বেঁচে থাকবে। আমরা তার আস্থা অর্জনের জন্য চলন্ত গাড়িতে যা কিছু বলা যায়, কিংবা করা যায়, তাই করেছি। তার মধ্যে এই ছবি তোলাও একটি। এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি।

র‍্যাব-১১ এর কর্মজীবনে এর চেয়ে বহু দুঃসাহসিক অভিযান আমরা করেছি। নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। ভবিষ্যতেও তাই করে যাব। সামগ্রিক ৮ ঘণ্টা অভিযানের মধ্যে নেয়া আসামির সঙ্গে একটি ছবি আপনার মনে আঘাত দিয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

রোববার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকা থেকে একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড তাজা গুলিসহ দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। সোমবার সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জে দেলোয়ারের মাছের খামারে অভিযান চালিয়ে সাতটি তাজা ককটেল ও বন্দুকের দুটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরক ও গুলি উদ্ধার ঘটনায় দেলোয়ারের রিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা হয়।