সম্প্রতি অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ‘ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট কারাগার থেকে ২৪৪ দিন উধাও ছিলেন’। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিয়েই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। খবরটি প্রচার হলে বিষয়টি সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়। এরপর ভোল পাল্টে ফেলেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা।
এটিকে এখন ‘ভুল তথ্য’ বলে মন্তব্য করছে কারা অধিদপ্তর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, হাসপাতাল থেকে একজন আসামির ২৪৪ দিন উধাও হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সম্রাট হাসপাতালেই ছিলেন। এখনো তিনি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন।
এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তথ্য বলছে, ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার সম্রাট ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি রয়েছেন।
সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্রাট ২০২১ সালের ২৬ জুলাই বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। এর আগে তিনি কারাগারে ছিলেন।
কারাগারের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র ১৫ দিন আগে কারাগার থেকে হাসপাতালে এসেছেন সম্রাট। তাহলে মাঝের বড় একটি সময় কোথায় ছিলেন তিনি? এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি কারা মহাপরিদর্শককে।
ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযানে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। একারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।
ক্যাসিনোকাণ্ডের মূলহোতা হিসেবে অভিযুক্ত যুবলীগের বহিষ্কৃত ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ২৪৪ দিন কোথায় ছিলেন? কারাগারের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র ১৫ দিন আগে কারাগার থেকে হাসপাতালে এসেছেন সম্রাট। তাহলে মাঝের বড় একটি সময় কোথায় ছিলেন তিনি? এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি কারা মহাপরিদর্শককে।
ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযানে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। একারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের বক্তব্যে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে ২৪ নভেম্বর থেকে পরের বছরের ২৬ জুলাই মোট ২৪৪ দিন কোথায় ছিলেন তিনি।
গত ১৩ আগস্ট প্রথম সংবাদ প্রকাশের পর আজ বুধবার (১৮ আগস্ট) এ বিষয়ে দেশের প্রথম সারির একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ফলোআপ নিউজ প্রকাশ করে। যেখানে পোর্টালটি কারা মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুনের বক্তব্য প্রকাশ করে। সেখানে কারা প্রধান বলেন, ‘ঘটনা কিছুই না। তারা কিসের ভিত্তিতে এটা বলেছে আমার জানা নেই। আমাদের কাছে যে তথ্য প্রমাণ আছে এতে সম্রাটের হাসপাতালের বাইরে যাওয়ার থাকার সুযোগ নেই। আমি বিএসএমএমইউ’র উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। তার তাৎক্ষণিকভাবে যতটুকু জানা ছিল, তিনি ততটুকুই বলেছেন। তার বক্তব্য অসম্পূর্ণ ছিল, সেটা অসম্পূর্ণভাবেই প্রচার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্রাট যে কারাগারে ছিল এ বিষয়ে কারাগারের কাছে সম্পূর্ণ তথ্য প্রমাণ আছে।’
সম্রাটের উধাওয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে মঙ্গলবার আইজি প্রিজন্স বিএসএমএমইউতে এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সম্রাট নভেম্বরের ২৪ তারিখ থেকে বিএসএমএমইউতে আছেন। বর্তমানে সিসিইউতে আছেন। মাঝে যে ২৪৪ দিনের কথা বলা হয়েছে তখন সম্রাট আমাদের এখানেই ছিল, বিভিন্ন ইউনিটে, ওয়ার্ডে, কেবিনে ভর্তি ছিলেন। তবে কারা অধিদপ্তর ও পুলিশ পাহারায় হাসপাতালের ভেতরেই ছিলেন। এখান থেকে বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে সম্রাটের উধাও হওয়ার সংবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। কারাগার জানায়, ‘সম্রাট বিএসএমএমইউতে ছিল। এ বিষয়ে প্রতি ১৫ দিন পর পর পর হাসপাতালের সঙ্গে কারাগারের কথা হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে কারারক্ষী, শাহবাগ থানা পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ, এনএসআইসহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা থাকেন। কোনোভাবেই হাসপাতালের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকেলে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় ৫ ঘণ্টা অভিযান শেষে ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। পরে তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং ও দুর্নীতির মামলাও হয়।
কারা কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী সম্রাট ২০১৯ সালের অক্টোবরে ৫ দিন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে, একই বছরের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাস ১৯ দিন বিএসএমএমইউ, সেখান থেকে ১৫ দিনের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল থেকে ১১ দিনের জন্য বিএসএমএমইউতে, সেখান থেকে ৬ দিনের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে যান। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে তিনি বিএসএমএমইউতেই ভর্তি আছেন।