আবু সাইদ, কালিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ক্যাসটেক গোলোবাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এলাকার সহজ সরল বেকার যুবক যুবতীদের মোটা অংকের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রতারণার জমজমাট ব্যবসাটি চলছে কালিগঞ্জের মতি হাজির বিল্ডিং’র সামনে অবস্থিত শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের বাড়ির দ্বিতীয় তলায়।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১২ টার দিকে সংবাদকর্মীরা ওই প্রতিষ্ঠানে গেলে বেরিয়ে আসে অপকর্মের নানা তথ্য। প্রতিষ্ঠানের কোন সাইনবোর্ড নেই অথচ অফিসের ভেতরে চলছে জমজমাট ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনবিহীন পণ্য বিক্রির নামে বহু নিরীহ মানুষদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
কালিগঞ্জে প্রতিষ্ঠানটি ৮ মাসে বহু মানুষের কাছ থেকে ডিস্ট্রিবিউটর করে দেওয়ার নামে জনপ্রতি নিয়েছে ১০ হাজার ২শ’ টাকা। ওই প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ২শ’ ও ১৭শ’ টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের আইডি পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা। প্রতিষ্ঠানে কেউ আইডি করে যদি সময় ও পরিশ্রম দেয় তাহলে তারা অল্প দিনে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের কথিত কর্মকর্তারা। তাদের যে সব পন্য সংবাদকর্মীদের প্রদর্শন করেছেন তাতে সরকার অনুমোদিত কোন স্টিকার বা লোগো নেই। এমন কি তাদের কোন পণ্য বাহিরের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিনতে পাওয়া যায় না। ওই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোন কাগজপত্রও দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বরং অন্য কিছু সংবাদকর্মীদের দিয়ে ম্যানেজ করার জন্য ব্যস্ত ছিলো কথিত ফাউন্ডার ডিরেক্টর।
ওই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ডিস্টিবিউটর আঞ্জুয়ারা খাতুন (২৪) জানান, তিনি কলারোয়া উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত খলিল মাষ্টারের মেয়ে। বর্তমানে তিনি কালিগঞ্জে একটি ভাড়াবাসায় বসবাস করছেন। এসময় সাংবাদিকরা তার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নাম শুনলে তিনি তা বলতে পারেন নি। ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ৮/১০ জনকে এই প্রতিষ্ঠানে ঢুকিয়েছি। এর বিনিময়ে আমি কিছু টাকা পেয়েছি। অনেক ছোট বেলায় আমার বিয়ে হয়। ওই সময়ে আমার দেহে রোগ হয়। কোন ঔষধে কাজ হচ্ছিল না। অবশেষে এই কোম্পানির কাছ থেকে ঔষুধ নিয়ে সেটি সেবন করে আমি সুস্থ। সেখান থেকে আমি প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের ঠেকরা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মেহেদী হাসান (২৩) জানান, প্রথমে এই প্রতিষ্ঠানের কিছু পণ্য তিনি ক্রয় করেন। পরে রেজাল্ট ভালো পাওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি।
ওই প্রতিষ্ঠানের ফাউন্ডার ডিরেক্টর উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের শওকাত আলীর গাজীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৪২) জানান, আমি প্রথম থেকে প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাদের ঢাকার প্রতিষ্ঠানে এসে কাগজপত্র দেখে কোন প্রকার ক্রটি পায়নি। তারা নির্বিঘেœ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেন। তবে সাংবাদিকদের তেমন কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। সব কাগজ ঢাকাতে আছে বলে জানান তিনি। কালিগঞ্জে তাদের কোন লাইসেন্স নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা সরাসরি পণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিয়ে বেকার সমস্যা দূর করছি। তাদের পণ্য গায়ে সরকারি বিএসটিআই এর অনুমোদন না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন দেখুন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। তাদের যদি বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।