জেলা প্রতিনিধি :
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কাটাপোল গ্রামে মাটির ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে অহিদুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত ও তার ৭ বছরের ছেলে ইয়াসিন গুরুতর আহত হয়েছে। নিহত অহিদুল ইসলাম (৪৫) পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার শংকরচন্দ্রপুর-বাথানগাছি গ্রামের মৃত সমসের বিশ্বাসের ছেলে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেয়ে জনরোষের এক পর্যায়ে জনতার হাতে লাঞ্ছিতের শিকার হন জীবননগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিম লিংকন। এসময় তিনি গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিলে জনগণ তাকে ঘিরে দীর্ঘক্ষণ অবরোধ করে রাখে। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ যেয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিম লিংকনকে উদ্ধার করে।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলার কাটাপোল ও মিনহাজপুর সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাবার পর গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে দুশতাধিক লোক তাকে ঘিরে ধরে। এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা তার ওপর হামলা চালায়। তিনি প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড় দিলে বিক্ষুব্ধ লোকজন ইউএনওকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় একটা ইট মাথায় লাগলে তিনি রক্তাত্ত হন। অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে তিনি পার্শবর্তী জমির উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এসময় বিক্ষুব্ধ লোকজনও ওই বাড়িতেও হামলা চালায়।
খবর পেয়ে জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করেন এবং অবরুদ্ধ থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কৌশলে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান জানান, তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তিন শতাধিক মানুষ ইউএনওকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন খুবই উত্তেজিত ছিল। আমি কৌশলে ইউএনওকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নিয়ে আসি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর ৫ মিনিট আগে আমি ওখানে পৌঁছাই এবং বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এসময় ইউএনও মহোদয় গাড়ি থেকে নামার পরই উত্তেজিত লোকজন তার ওপর হামলা চালায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিনা আখতার সুমি জানান, ইটের আঘাতে ইউএনও মহোদয়ের মাথায় আঘাত লেগেছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জীবননগর উপজেলার কাটাপোল গ্রামে মজিবর রহমান তার জমিতে পুকুর খননের নামে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে অহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত ও তার ৭ বছরের পুত্র ইযাসিন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিম লিংকন ও ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয় জনতার জনরোষে পড়েন এবং আহত হন।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, গত শনিবার বালি উত্তালনকারী মজিবর রহমান ওরফে মন্টু মাস্টারকে কে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অবৈধভাবে পুকুর খননের নামে মাটি উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সে আবারও ২০টি ট্রাক্টর লাগিয়ে উত্তোলন করছিল। এ সময় তার বালির গাড়িতে চাপা পড়ে একজন নিহত হলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
তিনি জানান, এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে হত্যা ও রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দানের অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে দোষীদের ধরতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে দ্রুত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) আবু রাসেল ও পুলিশ সুপার (এডমিন) তারেক আহম্মেদ ঘটনাস্থলে গেছেন। জড়িতদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
এদিকে স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, কাটাপোল গ্রামের শাখাওয়াতসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র বেশ কিছু দিন থেকে এলাকার বিভিন্ন জমি হতে মাটি কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করে আসছিল। প্রতিদিন ৫০-৬০টি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে মাটি আনা নেয়া করতো। এতে ওই এলাকার লোকজন চরম ক্ষুব্ধ ছিল।