জেলা প্রতিনিধি:শীতকালটা ভীষণ প্রিয় বাঙালীর। কত মানুষের জন্য অপেক্ষা করে থাকে! প্রথম মাসটি পৌষ। এ মাসে শীতকালের আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। গরম ভাবটা আর থাকে না। বরং হালকা শীতের পৌষ দারুণ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। যখন তখন বৃষ্টির নামারও আশঙ্কা থাকে না। সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রামে শহরে নানা উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এবার অবশ্য কোভিডের কাল। বৈরী সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা দুনিয়া। তাই কোথাও তেমন কোন উৎসব দেখা যাচ্ছে না। এদিকে মাঘ পরতে না পরতে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ ৯ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে হালকা শৈত্যপ্রবাহ। তৃতীয় দফায় শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ আগামীকাল রোববার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে। এরপর তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়বে। ২০ থেকে ২১ জানুয়ারির মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরেক দফা কমবে, বাড়বে শীত। এদিকে অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহের কারণে উত্তরের জনজীবন বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষেরা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তার মানে, মাঘের শীত আরও কয়েকদিন টানা অনুভূত হবে। এর পর ছোটখাটো বিরতি দিয়ে হানা দেবে তীব্র শীত। উপভোগ করার মতো অবস্থা নাও থাকতে পারে। আর তাই নতুন করে শুরু হয়েছে উষ্ণতার খোঁজ।
ঢাকার শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে এখন লক্ষ্য করার মতো ভিড়। ঠাণ্ডা বাড়লে বাড়তে পারে করোনার প্রাদুর্ভাব। এ কারণেও অনেকে আর বাইরের উৎসব অনুষ্ঠানের কথা ভাবছেন না। বরং বারান্দায় বসে সকালের রোদটুকু গায়ে মাখার জন্য অপেক্ষা করছেন। এমনকি বাসার আশপাশ দিয়ে উড়ে বেড়ানো ঘুরে বেড়ানো পাখিরাও কাবু হয়ে যাচ্ছে শীতে। তবে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। ঢাকার ফুটপাথে মৃতের মতো পড়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকানো যাচ্ছে না। মাঘ বাঘের মতোই হামলে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষগুলোর ওপর। এ অবস্থায় মানুষ হয়ে আমরা কি মানুষের পাশে দাঁড়াব না?
আবহাওয়া অধিদফতরের রেকর্ড অনুযায়ী শুক্রবার এই মৌসুমের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন নওগাঁর বদলগাছিতে ৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে পৌষের শুরুতে দেশের তাপমাত্রা নেমে আসে ৬.৬ ডিগ্রীতে। এদিকে শৈত্যপ্রবাহ দেশের অন্য এলাকায় বিস্তার লাভ করছে। তারা জানায়, রংপুর বিভাগসহ রাজশাহী, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শ্রীমঙ্গল, পাবনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা এবং নওগাঁ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। এটা আজও অব্যাহত থাকবে এবং আরও নতুন এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে।
শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইলে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী, গোপালগঞ্জে ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রী, ময়মনসিংহে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী, শ্রীমঙ্গলে ১০ ডিগ্রী, রাজশাহীতে ৯ ডিগ্রী, ঈশ্বরদীতে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী, দিনাজপুরে ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রী, সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রী, তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রী, ডিমলায় ১০ ডিগ্রী, রাজারহাটে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী, যশোরে ১০ ডিগ্রী এবং চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এসব এলাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।