জেলা প্রতিনিধি:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় নতুন করে আরও ৮৯০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। দেশে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯১০ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭ হাজার ৮৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২২ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষাসহ গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৫ হাজার ৭২৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গতকাল শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৪ জন মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ৮ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। অন্য একজনের মৃত্যু হয়েছে হোম আইসোলেশনে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ক্রমেই মহামারি আকারে সংক্রমণ বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায় সরকার। শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসের শেষের দিক থেকে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল। একপর্যায়ে দৈনিক রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছিল। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের গড় দুই হাজার ছাড়ায়। অবশ্য কিছুদিন ধরে নতুন রোগী শনাক্ত দুই হাজারের কম। তিন সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, টিকা না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বিশেষ করে বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা শতভাগ নিশ্চিত করা, কিছু সময় পরপর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার বিধি মেনে চলতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে শফিউদ্দিন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়েছে। গতকার বুধবার সকাল সাতটার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত বৃদ্ধ আলমডাঙ্গা উপজেলার বড় গাংনী গ্রামের নবিছদ্দিনের ছেলে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪৫ জন। এর মধ্যে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ও হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। অন্য চারজের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।
জানা যায়, কয়েকদিন যাবত শফিউদ্দিন ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গত ৩ জানুয়ারি তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ইয়োলো জোনে ভর্তি করা হয়। তাঁর শরীর থেকে সংগৃহিত নমুনায় ৪ তারিখ রাতে করোনা শনাক্ত হয়। পরদিন সকালে তাঁকে আইসোলেশন ইউনিটে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে করোনা ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তারিক আহমেদ শফিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল জেলায় নতুন কেউ করোনা শনাক্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫৭ জন। গতকাল বুধবার রাত আটটায় জেলা সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করে। গতকাল জেলায় নতুন কেউ সুস্থ হয়নি। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৯ জন।
গত মঙ্গলবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য ১৬ টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করে। গতকাল উক্ত ১৬ টি নমুনার ফলাফল নেগিটিভ আসে। গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য সদর উপজেলা থেকে ১৪টি, আলমডাঙ্গা থেকে ১০টি ও দামুড়হুদা থেকে ৩টি নমুনাসহ মোট ২৭টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৭ হাজার ৫৭৯টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৭ হাজার ৩৭০টি, পজিটিভ ১ হাজার ৬৫৭টি, নেগেটিভ ৫ হাজার ৭১৩টি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় হোম আইসোলেশনে ছিলেন ১৪ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিলেন ৩ জন।