জয়পুরহাটে আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে যানবাহন
জয়নাল আবেদীন জয়/জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের পাঁচটি থানা চত্বর ও আদালতের মালখানায় নষ্ট হচ্ছে আলামতের প্রায় ১ হাজার ২শ টি বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন। জেলার পাঁচটি থানা চত্বরের খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা যানবাহনের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মটরসাইকল। এছাড়াও রয়েছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ, নছিমন-করিমনসহ নানা ধরনের যানবাহন। বছরের পর বছর ধরে এসব যানবাহন অযত্নে,অবহেলায় ও রোদে-বৃষ্টিতে পড়ে থাকায় অনেকাংশই অকেজো হয়ে গেছে।
এসব যানবাহনের অধিকাংশই বিভিন্ন মামলায় আটক করা হয়। কিছু কিছু রয়েছে রেজিস্ট্রেশনবিহীনও। আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় এসব যানবাহন নিলামে বিক্রি করাও যাচ্ছে না। ফলে বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে অবহেলায় অযত্নে পড়ে রয়েছে এসব যানবাহন। এতে করে সরকারও হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর থানা চত্বর এবং আদালত চত্বরে বছরের পর বছর ধরে এসব যানবাহন পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব যানবাহন নিলামে বিক্রি করা বা বৈধ মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার সুযোগও নেই।
আদালত ও থানা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকায়, মাদক বহনের কারণে কিংবা দুর্ঘটনার দায়ে এসব যানবাহন জব্দ করা হয়। বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশর নিচে পড়ে থাকা এসব যানবাহনের চেহারা বর্তমানে বিবর্ণ রুপ ধারণ করেছে। থানা চত্বরে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে জব্দ করা এসব যানবাহন সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে পুলিশও এসব জব্দ আলামত নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে।
সরেজমিনে আদালত ও থানা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা এসব যানবাহনগুলো থানা চত্বরের ভিতরে খোলা আকাশের নিচে বেশিরভাগ জায়গা দখল করে পড়ে রয়েছে। ফলে আদালত ও থানা চত্বরের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে মরিচা ধরে জরাজীর্ণ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে। এরমধ্যে কিছুকিছু যানবাহনের যন্ত্রপাতি আলাদা হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার দু/একটি যানবাহন ভাঙারিতে পরিনত হয়েছে।
কালাই থানার ওসি ওয়াসীম আল বারী বলেন, মটর সাইকেলগুলোর অনেক মালিকের প্রকৃত কাগজপত্র নেই। এছাড়া থানায় জব্দকৃত গাড়ির তুলনায় রেজিস্ট্রেশন কিংবা মামলার খরচ বেশি পড়ায় তারা আদালতে মামলা পরিচালনায় অনীহা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটককৃত যানবাহনগুলোর প্রকৃত জিম্মাদার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত। সেখানে পর্যাপ্ত জায়গার সংকুলান না হওয়ায় এসব যানবাহন থানা চত্বরে রাখা হয়েছে। আদালত চত্বরের ধারণক্ষমতার অভাবে এ মালামাল স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি।
কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, কোটি কোটি টাকার মালামাল এভাবে রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত মালিকগণের সম্পদগুলোও নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, মামলার বাদী ও সাক্ষী উভয়ই পুলিশ। তাদের বদলিজনিত কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সাক্ষী দিতে তারা আসেন না এজন্য এ নিয়েও মামলার দীর্ঘ সময় লাগছে। এছাড়া বিচারক সংকটের কারণেও মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। ফলে এসব যানবাহন নিলামে বিক্রি করা অথবা প্রকৃত মালিককে হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।
জয়পুরহাট কোর্টের সিনিয়র ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, জেলায় বিভিন্ন সময় আটককৃত যানবাহন প্রায় ১ হাজার ২০০টি আলামত হিসাবে রয়েছে। এসব যানবাহন সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থানায় বা আদালতে নেই। তবে মটরযানগুলোর গুণগত মান ঠিক রাখতে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।