আমির হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির ১৩ কোটি টাকার নির্মানাধীন ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র শুরুর আগেই মরিচা ধরে অকেজেও হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নির্মান কাজে ঠিকাদারের ধীরগতি বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ঠিকাদারের খামখেয়ালী অব্যবস্থাপনা ও নির্বাহী প্রকৌশলীর গাছাড়া ভাবের কারনে মুখ থুবড়ে পরতে যাচ্ছে ঝালকাঠির ১৩ কোটি টাকার নির্মানাধীন ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। ১১ জেলা শহরের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের এ প্রকল্পে ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকো আপ গ্রেডেশন প্রকল্পের আওতায় ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ৩ বছরে ৩ বার সময় বাড়ানো হলেও কাজ শেষ হয়নি।
কিন্তু নির্মানাধীন উপকেন্দ্রটি এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে ১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে উপকেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ শেষ করে চালুর কথা থাকলও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অবহেলার কারনে তা হয়নি। এতে চালুর আগেই ব্রেকার গুলো মরিচা পড়ে অকেজ হয়ে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর ওজোপাডিকোর খুলনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিকউদ্দীন প্রকল্পটির ভিত্তিফলক স্থাপন করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সরবরাহ কেন্দ্রে নিজস্ব জায়গায় ভারতীয় ঠিকাদার কোম্পানী এলএনটি কোঃ লিমিটেড উপকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ৩ বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার কোম্পানী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, উপকেন্দ্রটির নির্মান কাজে ধীরগতির কারনে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ফিডার কেবল উপরে উঠানোসহ অনেক কাজ বাকি আছে। কবে নাগাদ এ কাজ শেষ করা হবে এর কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি শহরের নতুন কলেজ রোড সড়কে ওজোপাডিকো অনুরূপ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মান করে। এই কেন্দ্রটি ক্রমান্বয়ে পুড়াতন হওয়ায় সংস্কার জরুরী হয়ে পড়ে। তাই এটির কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় প্রতিদিনই বিশেষ করে সার্বাধিক গ্রাহকের ১ নং ফিডারসহ ৫ টি ফিডারে ঘন ঘন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এ কারনে ঝালকাঠির গ্রাহকদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন ঝালকাঠির বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতার কারন দেখিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। এসব ফিডারে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ২২ হাজার। এ ছাড়াও ওজোপাডিকোর আওতায় নলছিটিতে আরো ৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে। বিশেষ করে ঝালকাঠির ১ নম্বর ফিডারে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিপর্যয় হচ্ছে। এ ফিডারে গ্রাহকের সংখ্যা ৬ হাজার। বিগত ২০ বছর ধরে এ সমস্যা চলমান থাকায় গ্রাহকরা অতিষ্ট হয়ে পরেছে। ঘন ঘন ট্রিপ করায় ফিডার সেটিংর জন্য খুলনা ওজােপাডিকো প্রধান কার্যালয়ের প্রটেকশন বিভাগকে চিঠি দেয়া হলেও অদ্য পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানাযায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, প্রতিদিন এভাবে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারন হলো রুপাতলী থেকে গ্রীড ফেল করা, ৩৩ কেভির লাইন বন্ধ করে ঠিকাদারের কাজ করা, জরুরী রক্ষণাবেক্ষন কাজের জন্য লোশেডিং। এরসাথে প্রতিনিয়ত ট্রান্সফরমার ফিউজসহ বিভিন্ন কারনতো আছেই। সূত্র জানায় ৩৩/১১ কেভি নির্মানাধীন উপকেন্দ্রটি দ্রুত চালু করা হলে এসব সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতো। যার ফলে ফিডার বিভাজন করে ছোট করা হলে বিদ্যুতের লোড কমে আসবে। পাশাপাশি ন্যাশনাল গ্রীডের একটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হলে ঝালকাঠিতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
খুলনা ওজোপাডিকোর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ, ঝালকাঠিতে গত জুলাই মাসে ৫টি ফিডারে মোট ২২০ বার বিদ্যুৎ বন্ধ হয়েছে। এরমধ্যে ১ নম্বর ফিডারে ৪৫ বার, ২ নম্বর ফিডারে ৩৬ বার, পালবাড়ি ফিডারে ৩৬ বার, বিকনা ফিডারে ৩৯ বার এবং পশ্চিম ঝালকাঠি ফিডারে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়েছে ৪৪ বার। এর কারন জানতে চেয়ে ঝালকাঠি ওজোপাডিকোর কাছে খুলনা থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর গা-ছাড়া ভাবের কারনে এ সমস্যার সমাধান চেষ্টায় অধিকতর জোর না দেওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি শেষ হচ্ছেনা।
তাই পুরাতন উপকেন্দ্রটির পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে নতুন এই উপকেন্দ্রটির নির্মান কাজ দ্রুত শেষ করে চালুর উদ্যোগ নেয়া জরুরী হয়ে পরেছে। পুরাতন উপকেন্দ্রের আওতায় বড় ফিডার গুলোকে ভাগ করে নুতন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে সাথে সংযুক্ত করে ফিডার সংখ্যা বাড়ানো হবে। এতে অনাকাঙ্খিত ত্রুটির জন্য দুর্ভোগের পরিসর কমানো যাবে বলে ওজোপাডিকোর ঝালকাঠির কর্তৃপক্ষের দাবি। এ প্রকল্পের ঠিকাদরকে পাওয়া না গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট প্রকৌশলী জাকারিয়া শামিম জানান, আপাতত কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আগামী মাসে বিদ্যুৎ লাইন চাজিং এর কাজ শুরু করব। এখনও বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। যেমন পুরাতন উপকেন্দ্রের সংযোগ লাইন টাওয়ারে কাজ আছে। এরপর এই নতুন উপকেন্দ্রের লাইন চাজিং এর কাজ করতে হবে।
এছাড়াও ইন্ডিয়া থেকে পাথর আসতে দেরি এবং লকডাউনের জন্য প্রকল্পের মেয়াদে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এখনো বাউন্ডারি ওয়াল, ড্রেন নির্মাননের কাজ শুরু করা হয়নি। এরপর হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে কবে নাগাদ এটি চালু করা সম্ভব হবে তা এই মূহুর্তে বলা মুশকিল। এ বিষয়ে উপকেন্দ্রটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আবু দারদা জানান, প্রায় ৩ বছর হয়ে যাচ্ছে প্রকল্পটির নির্মান কাজের মেয়াদ। এরমধ্যে ৩ বার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এখনো ফিডার কেবল উঠানোর কাজসহ টুকটাক কিছু কাজ বাকি আছে। যা সম্পন্ন হলেই হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। এটি চালু হলে সাবষ্টেশনের ফিডার বিভাজনের নিরবিচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। তবে এই মূহুর্তে সাবষ্টেশনে যে কোন ফিডার ট্রিপ করলে অন্য ফিডার ট্রিপ করায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্র ঘটছে। এটাও থাকবেনা ফিডার সেটিং করা হলে।