DoinikAstha Epaper Version
ঢাকামঙ্গলবার ১৫ই জুলাই ২০২৫
ঢাকামঙ্গলবার ১৫ই জুলাই ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

দর্শনা হল্ট স্টেশনে বুকিং সহকারীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থে টিকেট বিক্রির অভিযোগ

DoinikAstha
এপ্রিল ৪, ২০২১ ১২:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জেলা প্রতিনিধিঃ

বৃটিশ শাসনামল থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে দর্শনা হল্ট স্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী। তবে বর্তমানে স্টেশনটি নোংরা পরিবেশসহ বিভিন্ন অনিয়মের আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে টিকেট বিক্রয়ের অভিযোগসহ নানা অনিয়মের খবর স্থানীয়রা কর্তৃপক্ষের নিকট জানালেও আজও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। বরং দর্শনা হল্ট স্টেশনে অনেক অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এই করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যবিধি না মানার চিত্র তো আছেই।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন পূর্বে বদলিসূত্রে দর্শনা হল্ট স্টেশনে বুকিং সহকারী হিসেবে যোগদান করেন মিসকাত আলী। যোগদানের পর থেকে অতিরিক্ত অর্থে টিকেট বিক্রি তার নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যেমন  বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে গেলে দর্শনা হল্ট স্টেশনের টিকেট কাউন্টারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এসময় পার্শ্ববর্তী দোকানী ও অপেক্ষকৃত টিকেট সংগ্রহকারীদের নিকট কাউন্টার বন্ধের কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা যাবত তারা টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন টিকেট সংগ্রহের জন্য। বুকিং সহকারী কাউন্টার বন্ধ করে নাকি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নাকি বাইরে গেছেন। আসলেই তবে মিলবে তাদের কাঙ্খিত টিকেট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিকেট সংগ্রহের জন্য কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে জীবননগর উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের এক ব্যক্তি জানান, ‘ঢাকার অগ্রিম টিকেট নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। বুকিং সহকারী মিসকাত আলী কাউন্টার থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় টিকেট দেওয়ার কথা বললে সে রাগান্নিত হয়ে বলে এখন কোনো ট্রেন নেই কম্পিউটার বন্ধ। আমি আসছি বলে স্টেশন ত্যাগ করে পরে আর আসেননি।

এছাড়া স্টেশনের পরিবেশও বেশ নোংরা, কোথাও দাঁড়িয়ে বা বসে থেকে অপেক্ষা করার মতো সুবিধাজনক স্থান নেই। তাই অনেক দুর্ভোগ পোহাইছি। ওইদিন স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখি দুুপুর পৌনে ২টার দিকে কাউন্টারে আসলেন বুকিং সহকারী মিসকাত আলী। ওইদিনই আমি ৪ তারিখের বেনাপোল এক্সপেস ট্রেনে ঢাকার অগ্রিম ১টি টিকিট চাইলে সাথে সাথে তিনি জানিয়ে দেন টিকিট নেই। পরে অন্য একটি মাধ্যমে তাকে ৫০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ঐ টিকেটটি সংগ্রহ করি।’

এবিষয়ে বুকিং সহকারী মিসকাত আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি সেসময় স্থানীয়দের উপস্থিতিতে বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে তা স্বীকার করছি।এসময় রেলপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য অপেক্ষামান একাধিক যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমাদের কারও কাছ থেকে একটি টিকেটের জন্য অতিরিক্ত ২০ টাকা, ২টি টিকেটের জন্য অতিরিক্ত ৫০ টাকা ও এমনকি একটি টিকিটের জন্য ৩০ টাকা করে বুকিং সহকারী বেশি নিয়েছেন।

আরো পড়ুন :  খুলনায় সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি ও রগ কেটে হত্যা

টিকেট পাওয়ার জন্য আমরাও অনেকটা নিরুপায় হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়েছি।’স্থানীয় ব্যক্তিরা আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘অধিকাংশ সময় টিকেট কাউন্টার বন্ধ থাকে। ট্রেন আসার পূর্বে ঘণ্টা বা মাইকিং করে যাত্রীদের টিকেট সংগ্রহের কথা বলার নিয়ম থাকলেও সেটি করা হয় না। এছাড়া নিয়মিত স্টেশনের প্লাটফর্ম পরিস্কার করার নিয়ম থাকলেও সপ্তাহে একবারও তা পরিস্কার করা হয় না।’

এবিষয়ে দর্শনা হল্ট স্টেশনের বুকিং কাউন্টার ইনচার্জ সুব্রত কুমার দাস জানান, ‘একটি টিকিটের যে মূল্য তার থেকে এক টাকাও অতিরিক্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে মিসকাতের বিরুদ্ধে একাধিক মৌখিক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। কয়েকদিন পূর্বে স্থানীয় এক যাত্রীর নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে টিকিট বিক্রয়ের জন্য হট্টগোলেরও সৃষ্টি হয়। পরে জিআরপি পুলিশ এসে ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিক সমাধান করে।’

দর্শনা হল্ট স্টেশনের জিআরপি পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ এসআই জিয়াউর রহমান জানান, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রায় সময় অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে টিকিট বিক্রয়ের অভিযোগ উঠছে। যাত্রীরা আমাদের কাছে প্রায়ই অভিযোগ দেয়। আমি নিজেও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট মিসকাতের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অবগত করেছি।’

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল স্টেশন ইন্সপেক্টর সামিমুর রহমান (পাকশী-খুলনা) জানান, ‘বুকিং সহকারী মিসকাতের বিরুদ্ধে আমার কাছে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। এর কয়েকদিন পূর্বেই আমার কাছে আরও একজন ব্যক্তি এ ধরনের একটি অভিযোগ করেন।

একটি লিখিত অভিযোগ পেলে অতিদ্রুত মিসকাতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্টেশন পরিষ্কারের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।’

এদিকে, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হল্ট স্টেশনে অনিয়ম অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয়রা গণস্বাক্ষর দিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে দর্শনা হল্ট স্টেশন বুকিং ইনচার্জ সুব্রত কুমার দাসের নিকট।

এসময় বুকিং ইনচার্জ সুব্রত কুমার স্থানীয়দের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ পত্রটি পাঠিয়ে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।