DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশনিবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২৪
ঢাকাশনিবার ২১শে ডিসেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ধর্ষিতার ডায়েরির ‘পাতায় পাতায়’ প্রতারণার গল্প

News Editor
অক্টোবর ৯, ২০২০ ১:১৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া শালবাগান থেকে গত মঙ্গলবার সকালে হাত-পা বাঁধা একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর এ ঘটনায় এক নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। আর দশজনের মতো তারও স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন। হঠাৎ করেই লাশ হয়ে গেলেন চম্পা (ছদ্মনাম)। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা।

এদিকে নিহত হওয়ার পূর্বে ধর্ষিতা তার ডায়েরির পাতায় পাতায় লিখে গেছেন প্রেমিকের নানা প্রতারণাসহ হত্যার হুমকির কথা। আর এ নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার চার শিশুকে এসি বাসে বাড়ি পাঠানোর নির্দেশ

চম্পা তার ব্যক্তিগত ডায়েরির এক পাতায় লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের জুলাই মাসের ১১ তারিখে কিছুদিন আগে থেকে আনিছুল আমার সাথে কথা বলা শুরু করে। কথা বলার এক পর্যায়ে ও আমার সাথে রিলেশন করতে চায়। তখন আমি ওকে বলি যে আমি ভালোবাসা নিয়ে কারো সাথে অভিনয় করতে পারবনা। যাকে ভালোবাসব তাকে সত্যিকারভাবেই ভালোবাসব। কিন্তু তোকে আমার পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব নয়। তখন আনিছুল বলে কেন সম্ভব নয়? আমি তো তোকে ভালোবাসি। আমি বললাম তোমরা আলাদা জাতি আর আমরা আলাদা জাতি এটা সম্ভব নয়। তখন আনিছুল আমার সাথে জোর করে রিলেশন করতে চায়। ও বলে জাতি দিয়ে কিছু হবেনা আমি তোমার সাথে রিলেশন করব। অনেকদিন আমার সাথে ও ফোনে কথা বলে। কার কাছ থেকে ও আমার মোবাইল নাম্বার পেয়েছে জানতে চাইলে ও কিছু জানায়না। ও বলে তোমার নাম্বারটা আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি। এভাবে অনেকদিন কথা বলার এক পর্যায়ে ও আমার সাথে অবৈধভাবে মেলামেশা করতে চায়। তখন আমি ওকে বললাম, এটাতো সম্ভব না। তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাহলে খারাপ প্রস্তাব দিচ্ছিস কেন। আমি জানতাম না যে ও এতটা খারাপ। আমি বিশ্বাস করেছিলাম ওকে, আর অনেক ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি যে ও ভালোবাসার নাম করে আমার জীবনটা এভাবে নস্ট করে দেবে।’

ধর্ষিতার ডায়েরির পাতা থেকে নেয়া
ধর্ষিতার ডায়েরির পাতা থেকে নেয়া

ডায়েরির অন্য এক জায়গায় চম্পা আরো লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের ৯ তারিখে রাতে বাড়ির পাশের লিচু বাগানে আমাকে সে জোর করে মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দেয়। তারপর জোরপূর্বক আমার সাথে শারীরিকভাবে মেলামেশা করে। আনিছুল যে সিঁদুর আমাকে পরিয়ে দিয়েছিল সেই সিঁদুরটা এখনো আমার ব্যাগে আছে। আমার সাথে মেলামেশা হয়ে যাবার পর ও অন্য মেয়ের সাথে কথা বলা শুরু করে। ওই মাসের পনের তারিখে ও সম্পর্ক শেষ করে দিতে চায়। কিছুদিন পর আবারো সে আমাকে ফোন দেয়, কথা বলে আবার জোর করে মেলামেশা করে। সে আমার কোন কথাই শুনতনা। ও আমাকে সিঁদুর পরিয়ে দেয়ার পর আমি ওকে স্বামী হিসেবেই মেনে নেই। আমার জীবনটা নস্ট করে ও আরেকজনকে বিয়ে করেছে আমার সম্মতি না নিয়ে।’

ধর্ষিতার ডায়েরির পাতা থেকে নেয়া
ধর্ষিতার ডায়েরির পাতা থেকে নেয়া

ডায়েরির আরেক জায়গায় চম্পা লিখেছেন, ‘অনেক আশা ছিল পড়াশোনা করে কোন একটা ভালো চাকরি করে বাবা-মা, ভাই-বোনের জন্য কিছু একটা করব। ভাল কিছু করব। কিন্তু ও আমাকে বাবা-মা, ভাই- বোনের জন্য ভাল কিছু করতে দিলনা। আমাকে শেষ করে ফেলল আনিছুল।’

ডায়রিতে চম্পার শেষ লেখা- ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। সেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে। একথা ও নিজে বলেছে যে ও আমাকে নিজের হাতে হত্যা করবে। আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।’

ধর্ষিতার ডায়েরির পাতা থেকে নেয়া
ধর্ষিতার ডায়েরির পাতা থেকে নেয়া

আর তার পরদিন ৬ অক্টোবর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়ার রাস্তার ধারে একটি শালবাগানে।

নিহতের বাবা বলেন, ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি চম্পার প্রবল আগ্রহ থাকায় অনেক কষ্ট করে ওকে এতদূর এনেছি। কিন্তু সবকিছু নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। তার মা বলেন, সে ছিল চাপা স্বভাবের। ওর যে এত বড় ঘটনা ঘটেছে সে কখনো তা কাউকে বুঝতে দেয়নি।

বৃদ্ধ রাজদেব রাউত বলেন, চম্পা ছিল এখানকার আদিবাসীদের গর্ব। কারণ ওর মত মেধাবী কেউ ছিলনা। এমনকি শিক্ষায় অতদূর পর্যন্ত এখনো কেউ যেতে পারেনি।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, আনিছুল পেশায় একজন সবজি ব্যবসায়ী। মাস দেড়েক আগে সে বিয়ে করেছে। লোকজনের ধারণা, এ থেকেই চম্পার সাথে আনিছুলের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং তা হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।

এ ঘটনায় পার্বতীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ হত্যকাণ্ডে জড়িত থাকায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হলো- খোর্দবাগবাড়ের আব্দুল গফুরের ছেলে ও কথিত প্রেমিক আনিছুল, বাচ্চু মিয়ার ছেলে রাজ এবং পার্বতীপুর উপজেলার দূর্গাপুর এলাকার নয়াপাড়ার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আশিকুজ্জামান।

পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রেমের সূত্র ধরেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। মূল আসামী আনিছুল দিনাজপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:১৪
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৯
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:১১
  • ১১:৫৯
  • ৩:৪০
  • ৫:১৯
  • ৬:৩৮
  • ৬:৩৬