নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে বিএনপি!?
আস্থা ডেস্কঃ
নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তারই ধারাবাহিকতায় একের পর এক কর্মসূচী দিয়ে যাচ্ছে দলটি। রাজধানীর পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশসহ দেশব্যপী সমাবেশ করেছে বিএনপি। মহাসমাবেশ থেকে নতুন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশ থেকে সরকার হঠানোর এক দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচিও ঘোষণা করছেন। সেই প্রেক্ষপটে মহাসমাবেশের পর পদযাত্রা, সমাবেশ, গণমিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। সর্বশেষ গতকাল শনিবার (২৬ আগস্ট) কালো পতাকা মিছিল করেছে বিএনপি।
তবে মহাসমাবেশে যে জনসম্পৃক্ততা বিএনপি প্রদর্শন করেছিল, এর পর থেকে আর কোনো কর্মসূচিতেই বিএনপি সে ধরনের জনসম্পৃক্ততা দেখাতে পারেনি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নামে বিভিন্ন ধরনের মামলা, আটক, জেল-হাজতে অবস্থান। বিএনপির শতশত কর্মী মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে আটকের আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের শীর্ষ তিন নেতা চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠেছে, এরকম একটি আন্দোলন পরিস্থিতিতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বিদেশ কেন?
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন।
গতকাল শনিবার (২৬ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মির্জা আব্বাস সিঙ্গাপুরে যান। তাঁর সঙ্গে স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও ছিলেন। মির্জা আব্বাসের আগে গত ২৪ আগস্ট চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর সঙ্গে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও সিঙ্গাপুরে গেছেন। মির্জা ফখরুল যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার আগে থেকেই সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২৭ জুন তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, নির্বাচন থেকে দূরে থাকা বিএনপির জন্য একটি অত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, কর্মীদের কোনো ধরনের আশা-ভরসার জায়গা থাকে না। নির্বাচনে দাঁড়ালেই কেবল একটি আশার সঞ্চার হয়। ভোটের রাজনীতিতে তৃণমূলে বিএনপির যথেষ্ট ভোট রয়েছে। দল যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং মনোনয়ন দিলে তারা অবশ্যই নির্বাচন করবেন। তারা মানসিকভাবে যথেষ্ট প্রস্তুত। যদি দল নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তারা অংশগ্রহণ করবেন এবং সঠিকভাবে নির্বাচন হলে তারা জয়লাভ করবেন বলেও জানান।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আরও বলছেন, আর দল যদি নির্বাচন থেকে সরে এসে কেবল এক দফা দাবি নিয়েই রাজপথে আন্দোলনে থাকতে চায়, সেক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে নেই। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন যে পর্যায়ে হওয়ার কথা, তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কেননা, আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ই বিএনপির মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আন্দোলনকে আরও বেগবান করা জরুরি।
কিন্তু যে শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে তারা দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকেন, দলের এই আন্দোলনের অন্তীম মুহূর্তে সেই নেতারাই চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। এ সময়ে তারা কেন দেশের বাইরে থাকবেন?- এটাই বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরে বড় প্রশ্ন। তারা বলছেন, এই সময়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব যদি মাঠে না থাকেন, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে কাঙ্খিত দাবি আদায় সম্ভব হবে না।
বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা কেন বিদেশে? -এই প্রশ্নটি শুধু বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরই প্রশ্ন নয়। চিকিৎসার জন্য বিএনপির তিন শীর্ষ নেতার সিঙ্গাপুরে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খুদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
আজ রোববার (২৭ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, এখন দেখলাম বিএনপির তিন নেতা সিঙ্গাপুর গেছেন। পত্র-পত্রিকা লিখছে এটা কি আদৌ চিকিৎসা? নাকি আরও কোনো ষড়যন্ত্র করার উদ্দেশ্যে তাদের তিন নেতা একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর গেলেন। এটি অনেকের প্রশ্ন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে আইভি রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওই আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মোশতাক এবং জিয়া। আর ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারেক রহমান। তারা আসলে হত্যার রাজনীতিটাই করে। হত্যার রাজনীতির মাধ্যমেই জিয়াউর রহমানের উত্থান এবং ক্ষমতায় টিকে থাকাটাও হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে অব্যাহত রেখেছে। তার (জিয়াউর রহমান) বিরুদ্ধে যখনই সেনাবাহিনীতে ক্যুর প্রচেষ্টা হয়েছে, তখনই নির্বিচারে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,বিএনপির এই তিন শীর্ষ নেতা মূলত সিঙ্গাপুরের একই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে সেখানে তারা চিকিৎসার নাম করে রাজনৈতিক আলোচনা করতেই পারেন। সেখান থেকে বিএনপি নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে, যা বিএনপির শুধু তৃণমূল নয়, তা কেউই জানতে পারবে না। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার নাম করে বিএনপি যে নতুন কোনো কৌশল নিচ্ছে- তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত এই নেতাদের কেউ একজন ফিরে এলেই বোঝা যাবে, নতুন কি ধরনের কৌশল নিচ্ছে বিএনপি।