নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: ক্ষমতার লোভে পেয়েছে উপদেষ্টাদের
- আপডেট সময় : ০৬:২৭:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
- / ১০৫৮ বার পড়া হয়েছে
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: ক্ষমতার লোভে পেয়েছে উপদেষ্টাদের
মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ
ক্ষমতার লোভে পেয়েছে উপদেষ্টাদের অধিকাংশকে। নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চেয়ার ছাড়তে রাজি নন এসব উপদেষ্টা। আর এ কারণে নির্বাচন বানচালের একের পর এক নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের একটি অংশ রাজনীতির মাঠে নির্বাচনবিরোধী ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছেন।
সরকারের ভেতর থেকেই উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। নানামুখী চাপে পড়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দৃশ্যত নির্বাচনের দিকে গেলেও তলে তলে তিনিও এসব ষড়যন্ত্রে ইন্দন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ড. ইউনূসের ঐকমত্য কমিশনের নামে ‘জামায়াত-এনসিপির
এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী’ কমিশনেরও নেপথ্য লক্ষ্যও একই ছিল। ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ কর্মকাণ্ডে তা-ই প্রমাণিত হয়েছে। ঐক্যের পরিবর্তে জাতিকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিয়েছেন ড. আলী রিয়াজসহ ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা, যা এক নতুন সংকট তৈরি করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স ১৫ মাস অতিক্রম করলো। সরকারের এই ১৫ মাসের অর্জন নেই বললেই চলে। প্রায় প্রত্যেকটি সেক্টরের চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবস্থার আগের চেয়েও অবনতি ঘটেছে। রাষ্ট্র মেরামতের একটা সুবর্ণ সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ, একথা সচেতন মহলের প্রায় প্রত্যেকেই এখন একবাক্যে বলছেন।
এরজন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দায়ী করছেন। ৫ আগস্ট, ২০২৪ এর পর নবগঠিত সরকারের শুরু থেকেই উদ্দেশ্য ছিল যেন ‘রাষ্ট্র মেরামত নয়, অন্য কিছু’। নিজেরাও এই সুযোগে আখের গুছিয়ে নেয়া। আর আওয়ামীলীগ বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করা। দেশ গড়ার পরিবর্তে দেশকে নতুন করে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ঠেলে দেওয়া। বলা যায়, এই কাজগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা পুরোপুরিই সফল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের মেয়াদের এই সোয়া এক বছরে উপদেষ্টারা অধিকাংশই নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। যা অনেক ক্ষেত্রে অতীতের সকল রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন উপদেষ্টাদের দপ্তরের একজন কর্মচারীও।
সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা কত টাকার মালিক হয়েছেন, তা কল্পনা করাও কঠিন। মাত্র এই সোয়া এক বছরে উপদেষ্টাদের কারো কারো অবৈধ আয় কয়েক হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। এসব টাকা তারা বিদেশ পাচার করেছেন নানাভাবে, এমন তথ্যও বেরিয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, উপদেষ্টাদের অধিকাংশের মধ্যে অবৈধ আয়ের এই লোভ ভয়াবহ আকারে ধারণ করেছে। নির্বাচন হয়ে গেলে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তারা এখন নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই আওয়ামীলীগ বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছেন এই উপদেষ্টারাই। বিভেদ তৈরির এ কর্মকাণ্ডে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও পুরোপুরি সায় রয়েছে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে বিএনপি। অথচ এ দলটিকে মাইনাস করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকে। যা এক রকমের অসম্ভব ব্যাপার ছিল। অসম্ভব এ কাজটিকে সম্ভব করতে গিয়ে যত রকমের অপকর্ম-ষড়যন্ত্র করা যায় সবই করেছেন এই উপদেষ্টারা।
দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে বিএনপির প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিএনপির প্রতিপক্ষ হওয়ার সক্ষমতা ধারেকাছেই নেই এই দলটির।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের এসব চক্রান্তে মূলতঃ বিদেশি শক্তির সক্রিয় ইন্দন রয়েছে। এদের সবার এজেন্ডা হলো সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতি তোয়াক্কা না করে দেশে অনির্বাচিত সরকার বহাল রাখা। দেশকে গণতন্ত্রের পথে আসতে না দেয়া, হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদ ও বিশৃঙ্খার দিকে ঠেলে দেয়া।
এটা সম্পূর্ণতঃ বিদেশি এজেন্ডা, যারা বাংলাদেশকে আরেকটি ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন বানাতে চায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, আশপাশের এই পুরো এলাকাকেই তছনছ করে দিতে বিদেশি চক্রটির দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেলে, নির্বাচিত সরকার গঠিত হলে এদের দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যান বানচাল হয়ে যাবে অথবা পিছিয়ে যাবে। তাই কোনো ক্রমেই নির্বাচন হতে দিতে চায় না এরা।

















