প্রশ্নবিদ্ধ সাংবাদিকতা পেশা!!
এস. এম. স্বাধীনঃ
জেলা জুড়ে কথিত কার্ডধারী সাংবাদিকদের দৌরাত্ম চরম ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চা-বিক্রেতা, দারোয়ান, রাজমিস্ত্রি, দলিল লেখক, মাছ ব্যবসায়ী, হোটেল বয়, ড্রাইভার, ঠিকাদার ও এনজিও কর্মী এরা সবাই সাংবাদিক।
এ সকল তথাকথিত কার্ডধারী সাংবাদিকদের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে নিরীহ, নিরপরাধ মানুষ। আর এইসব সাংবাদিকের ফাঁদে পড়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ সাধারণ মানুষ হয়রানি শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে ওইসকল কথিত নামধারী সাংবাদিকরা।
শরীয়তপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত নানা পেশাজীবী মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করা তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে। যা সৎ সাংবাদিকতা আর গণমাধ্যমের জন্য হুমকি স্বরূপ! বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ গুলোর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে বিপদগামী করে তুলছে।
অনেকেই আছে ব্যক্তিগত সাংবাদিক কোন নেতার তেলবাজি বা চামচামি করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাদের সাংবাদিকতা করা। যেখানে একজন সাংবাদিকের হওয়া উচিত স্বতন্ত্র তিনি কোন দল বা ব্যক্তির পক্ষপাতিত্ব করতে পারবেন না। অথচ সাংবাদিক সমাজ আজকে এক এক জন নেতার জন্য একেকজন নির্দিষ্ট হয়ে কাজ করে এবং তাদের কার্যক্রম তুলে ধরাই যেন তাদের নিত্যদিনের কাজ সংবাদ পড়লে বা শুনলেই বুঝা যায় যেন এক অদৃশ্য তেলবাজি।
একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকে শতভাগ সংবাদ প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। সঠিক ও সৎ সাংবাদিকতা সমাজ বদলে দিতে পারে। অথচ কথিত এসব কার্ডধারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের ফলে পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রকৃত সাংবাদিকদের বিব্রতকর অবস্থা ছাড়াও জেলায় কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের মাঝে মধ্যে পড়তে হচ্ছে ঝুঁকির মুখে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এসকল ভুয়া সাংবাদিকদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করার দাবি সচেতন মহলের।
এক শ্রেণীর মতলববাজ স্ব-ঘোষিত সাংবাদিকদের একটি চক্র। ফায়দা নেওয়ার জন্য সাংবাদিকতা বাণিজ্যের ভিড়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিজ্ঞাপন পাওয়ার আশায় অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত ব্যক্তি থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনসহ ভিন্ন ভিন্ন পেশার লোকদের কাছে অর্থের বিনিময়ে কার্ড বাণিজ্য করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নামসর্বস্ব জাতীয়, স্থানীয় ও সাপ্তাহিক পত্রিকার জেলা, উপজেলা পর্যায়ে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে এ-সকল কথিত কার্ডধারীরা রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক।
এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কিংবা সংবাদ লিখতে না জানলেও সাংবাদিক পরিচয়ে ডিসি অফিস, জেলা পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি পাশাপাশি থানার দালালি করে বেড়াচ্ছে কথিত সাংবাদিকরা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভূঁইফোঁড় কথিত সাংবাদিক পরিচয় নকারীরা কার্ডের অপব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় সর্বত্র সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে জাহির করে।
শরীয়তপুর জেলার যেখানে-সেখানে মান্দায় অবাধে বিচরণ করছে ওইসব সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিরা। এরা চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরণের অপরাধ অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছে। এছাড়া কিছু মূলধারার সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে সঙ্গে রেখে। কথিত সাংবাদিকরা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধ, অপকর্ম চালিয়ে যেতে নামে-বেনামে নিজেরাই গড়ে তুলেছে একাধিক ভুয়া সংগঠন।
অন্যদিকে চোখে পড়ে, প্রেস কিংবা সাংবাদিক লেখা ভূঁইফোঁড় কিছু পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের স্টিকার মোটরসাইকেলে ব্যবহার করে এক শ্রেণীর নামধারী সাংবাদিকরা অবাধে চসে বেড়াচ্ছে। এরা কিন্তু সবাই সাংবাদিক নন, এদের গাড়ির কাগজপত্র ড্রাইভিং লাইসেন্স কোনটাই নেই। ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে সাংবাদিক না হয়েও প্লেস বা সাংবাদিক কিংবা নামসর্বস্ব পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন টিভির স্টিকার মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহার করে পুলিশের সামনে দিয়েই নির্বিঘ্নে দাবড়ে বেড়াচ্ছে।
শরীয়তপুর জেলার কর্মরত দেশের বহুল প্রচারিত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ও জেলার সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেন “ব্যাঙের ছাতার মতো জেলা জুড়ে গড়ে উঠেছে ভুয়া সাংবাদিক। এটি অস্বীকার করার কোন কারণ নেই, তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের ফলে মূলধারার সাংবাদিকরা মূল্যায়িত হচ্ছে না। দিন দিন সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে মানুষের কাছে সাংবাদিকরা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ এসব কার্ডধারী সাংবাদিকদের মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পাড় হলেও তাদের কোন সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায় না।
সাংবাদিক নেতারা আরো বলেন, এসব কথিত ভূঁইফোড় সাংবাদিকরা বিভিন্ন এলাকা দাবড়িয়ে নানা অপকর্ম কর্মকাণ্ড করে চাঁদাবাজির মহা উৎসবে মেতে উঠেছে। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অতিদ্রুত এ-সকল অপরাধকর্মের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আশারাখি এদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে এবং নিজের অবস্থানকে খুব ছোট মনে হয়। মানুষ হাসি-ঠাট্টা করে এই পেশাটাকে। এই পেশায় লেভেল বলতে কোন কিছু নাই। যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা একাডেমি কোন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নাই। যে কেউ চাইলেই সাংবাদিক হতে পারে। এটাকে রুখতে না পারলে মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা হারাবে।