ফ্ল্যাট মালিক বাসাছাড়া ভাড়াটিয়ার দাপটে। ঢাকার বারিধারায় কূটনৈতিক জোনে এক ভাড়াটিয়ার দাপটে অন্যত্র থাকতে বাধ্য হচ্ছেন ফ্ল্যাট মালিক জেসমিন জেসি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের চুক্তিতে এসএএস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এটি সানোয়ার কাদেরকে সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউর কে-বকের ১০১ নম্বর বাড়ির চারতলার এ-ফোর ফ্ল্যাট ভাড়া দেন জেসি।
মাসিক ৬৯ হাজার টাকা ভাড়া। নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চললেও করোনার অজুহাতে প্রায় দেড় বছর ধরে ফ্ল্যাট ভাড়া দিচ্ছেন না সানোয়ার কাদের।
উল্টো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ডাকাতি মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন জেসিকে। ভাড়ার টাকা চাইতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়েছেন তিনি। তবে ভাড়াটিয়া সানোয়ার কাদের দাবি করেছেন, আদালতের মাধ্যমে ভাড়া দিচ্ছেন তিনি।
ভুক্তভোগী দৈনিক আস্হাকে বলছেন, থানা থেকে কেউ তাকে ডাকেননি কিংবা আদালত থেকে কোনো নোটিশ পাননি। তিনি কাদেরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভাড়া না পাওয়ার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি। এরপরও প্রতিকার পাইনি। বরং ভাড়াটিয়ার হুমকিতে নিজের ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। অনেকটা আতঙ্ক নিয়ে রাজধানীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকছি।
জেসমিন জেসি জানান, মা-খালাদের জায়গাটি একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দেন তারা। সেখান থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এ ফ্ল্যাটের মালিক হন
২০১৫ সালে এসএএস-এর মালিক এটি সানোয়ার কাদেরকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন। ভাড়াটিয়া হিসাবে ওঠে একের পর এক চুক্তিভঙ্গ করতে থাকেন সানোয়ার।
সানোয়ার অনুমতি ছাড়া বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগান তিনি। এ ছাড়া ছাদে অনুমতি ছাড়া পাখি পালন করায় ২০১৯ সালে ফ্ল্যাট মালিকদের পক্ষ থেকে তাকে নোটিশ করা হয়।
একপর্যায়ে সানোয়ার কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। চুক্তি শেষ হলেও তাকে ফ্ল্যাট থেকে নামাতে ব্যর্থ হন তিনি। সানোয়ারের চাপের মুখে ২০২০ সালে দুই বছরের জন্য ফের চুক্তি করতে বাধ্য হন জেসমিন জেসি। এ সময় করোনার অজুহাতে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন তিনি।
যদিও করোনার কারণে দুই মাসের ভাড়া তিনি নিজে থেকেই মওকুফ করেন। এরপরও ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ভাড়া প্রদান করা বন্ধ রাখেন কাদের। তবে তার অফিস নিয়মিতই খুলছেন এবং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে প্রায় দেড় বছরের মতো ভাড়া না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেসমিন জেসি।
তিনি আরও জানান, চুক্তি ভঙ্গের কারণে ভাড়াটিয়াকে বাসা ছাড়ার নোটিশ দিয়ে লাভ না হওয়ায় পরে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সানোয়ার কাদের ফ্ল্যাট না ছাড়ার হুমকি দিচ্ছেন। এরপর থানায় দ্বারস্থ হন তিনি। গুলশান থানায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে জিডি করেন। তবে এতেও প্রতিকার পাননি তিনি। প্রায় ১০ লাখ টাকা বকেয়া ভাড়া দিচ্ছেন না ভাড়াটিয়া সানোয়ার কাদের।
জেসমিন জেসি আরও বলেন, তার বড় ধরনের কোনো প্রতারণার ভয়ে আমি আতঙ্কে রয়েছি। তিনি আগেও কয়েকটি বাসায় ভাড়া না দিয়ে এভাবে ছিলেন। সানোয়ার কাদেরের বিরুদ্ধে জিডির তদন্ত করছেন গুলশান থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ফ্ল্যাটটির মালিক জেসমিন জেসির জিডির পরেই আমি সশরীরে ওই ফ্ল্যাটে গেছি। ভাড়াটিয়া সানোয়ার কাদেরকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সময় দিতে বলেছি। বিষয়টি আপস-মীমাংসার চেষ্টা করছি।
ফ্ল্যাট মালিকের অভিযোগ প্রসঙ্গে সানোয়ার কাদের বলেন, এটা কোনো বিষয় না। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত আমার সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্ট করা আছে।জিডি করে রেখেছি থানায়। তবে দীর্ঘদিন ভাড়া না দেওয়ার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান তিনি। কাদের বলেন, আমরা এখানে ৫-৭ বছর ধরে আছি। অ্যাগ্রিমেন্ট, ভাড়া সবকিছু আমাদের কাছে আছে।
ভয়ভীতি দেখানোর প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে দম্ভ করে বলেন, উনারা তো অনেক কিছুই করেছে, উনারা উনাদের বাপের কাছে গেছে, ডিসির কাছে গেছে, থানায় গেছে, গিয়ে লাভ তো নাই। এমন কোনো বাপ নাই যার কাছে যায় নাই। এমপি ফারুকের কাছে গেছে, কমিশনারের কাছে গেছে। একপর্যায়ে তিনি এ প্রতিবেদককে এই বিষয়ে তার কাছে আর ফোন না করার পরামর্শ দেন।