বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপর চড়াও ইরানি টেলিভিশন
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেসটিভির এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের উপর চড়াও হয়েছে। বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করছে যুক্তরাষ্ট্র’ শিরোনামে গত শুক্রবার অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরতেই উপস্থাপক বলেন, বিশ্বে তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে নিজের স্বার্থে সরকার বদলের ইতিহাস রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র হরণের চেষ্টা করছে।
অনুষ্ঠানে, ২০২১ সালে র্যাবের উপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং এ বছর গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বাঁধা দেয়া বাংলাদেশির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গও উঠে আসে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটন নিজ স্বার্থে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতে বলা হয়, দেশটির সম্পদ, বাণিজ্য রুট ও কৌশলগত অবস্থানকে ব্যবহার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী। উপস্থাপক তার কাছে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা পাঁচটি উপায়ে বিশ্বজুড়ে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায়। প্রথমটি অবশ্যই ভ্যালু সিস্টেম, এটিকে মূল্যবোধকেন্দ্রিক কিংবা আদর্শিক বলা যায়। দ্বিতীয়টি পলিটিক্যাল সিস্টেম। তৃতীয়টি তাদের ইকোনমিক সিস্টেম বা কারেন্সি ডমিনেন্স। চতুর্থটি ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড ল এবং পঞ্চমটি হলো সিকিউরিটি ডোমেইন।
বাংলাদেশের পলিটিক্যাল সিস্টেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের দিকে যদি তাকাই, তা হলে অবশ্যই আমাদের শুধু ভ্যালিউ সিস্টেমের কথা বললে চলবে না। কারণ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরানসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো চায় পশ্চিমা আধিপত্যবাদ কমুক, এটা তাদের কমন ইন্টারেস্ট। চীনা বিনিয়োগ সম্পৃক্ততাকে তারা আশার আলো হিসেবে দেখে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন চায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের সব জায়গাতেই রেজিম পরিবর্তনের চেষ্টা একটা বাস্তবতা। কোনো উন্নয়নশীল দেশ যদি পশ্চিমাদের নীতি অনুসরণ না করে সে ক্ষেত্রে রেজিম চেঞ্জ একটি অপশন। তারা সেটি পারুক বা না পারুক, সেটি ভিন্ন আলাপ।
কিন্তু বাংলাদেশকে এখন নিজ দেশের রাজনীতি এবং আঞ্চলিক রাজনীতির পাশাপাশি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করার চ্যালেঞ্জকে সামলাতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে তিনটি ডোমেইন দিয়ে বিচার করতে হবে, নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং বৈদেশিক নীতি।
এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘আপনাকে মানতে হবে, বাংলাদেশ এদিক থেকে তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে। দেশটি কোনো ইস্যুতে কারও বিরুদ্ধে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা চীন কারও পক্ষ নেয়নি। যদিও তাকে চীনা বিনিয়োগ কমানোর জন্য নানা চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। চীন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিনিয়োগেকারী দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ধরন চীনের তুলনায় ব্যতিক্রম।
চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা ছাড়াই বিনিয়োগ, যৌথ উদ্যোগ এসবে বিশ্বাস করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জবরদস্তি, চাপ প্রয়োগ, নিষেধাজ্ঞাসহ যত উপায়ে সম্ভব নিজ নীতি মানতে উন্নয়নশীল বিশ্বকে বাধ্য করে।