ভাঙ্গায় দায়িত্বে অবহেলায় পাঁচ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
চাবি হারানোর অজুহাতে গত তিনদিন বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকায় বুধবার দুপুর থেকে প্রধান শিক্ষিকা অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্র/ছাত্রীরা। তবে এ বিষয় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা যুক্তিযুক্ত কোন উত্তর দিতে পারেন নি।
সরেজমিনে জানাযায়, চাবি হারানোর কারণে তিনদিন ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের ১১১ নং চৌধুরীকান্দা সদরদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা ও সহকারী পাঁচ শিক্ষিকা বিদ্যালয় বন্ধ রাখেন। বিদ্যালয় অঘোষিত ভাবে বন্ধ রাখায় কোমলপ্রাণ শিশু শিক্ষার্থীরা সকল শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে আনদোলন ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে করে অভিভাবক মহলের তোপের মুখে পড়েন ঔ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রীমা আকতারসহ অন্যান্য চার শিক্ষিকা।
এলাকার সাধারন মানুষের অভিযোগ ও মিডিয়ার প্রচারিত সংবাদে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় চৌধুরীকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ চার সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মহসীন রেজা।
সরজমিনে আরও জানাযায়, সাইন বোর্ড বিহীন বিদ্যালয়ের কাছাকাছি যেতেই দেখা যায় কক্ষে তালাঝুলছে। কিছু সময় পরে বিদ্যালয়ের মাঠে ছুটে আসে শিশু শিক্ষার্থীরা। তারা সাংবাদিক দেখেই একের পর অভিযোগ তুলে ধরেন প্রধান শিক্ষিকাসহ সহকারী শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে।
বিদ্যালয়ের শিশুরা জানায়, চাবি হারানোর অজুহাত গত তিনদিন ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকায় বুধবার দুপুর থেকে লেখাপড়া করতে না পারায় ছাত্র/ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষিকা অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করে।
স্থানীয় সূত্র জানা মতে, প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় হওয়ার সুবাদে বিদ্যালয়টি নিজের মত করে পরিচালনা করে আসছেন। ১৫০ জন শিক্ষার্থীর বেশী কাউকে তিনি ভর্তি করেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। টয়লেট সব সময় তালা দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। শিশুরা টয়লেট করতে চাইলে বাড়িতে যাওয়ার ধমকানো হয়।
এছাড়া স্কুলের মেরামতের যে টাকা আসে তিন নিজের খেয়ালে খরচ করেন। প্রধান শিক্ষিকা তার সহকারী শিক্ষিকাদের সাথেও প্রতিনিয়ত ঝগড়া বিবাদ করেন।এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে ১৫০ জন ছাত্র ছাত্রীদের লেখা পড়ার হ. য. ব. র. লা. অবস্থায় চলছে বলে জানিয়েছেন এলাকার সচেতন অভিভাবক মহল।
ভাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মহসিন রেজা বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তালা ভেঙে ক্লাস চালু করতে নির্দেশ দিলেও বুধবার পর্যন্ত রুম বন্ধের কারনে ক্লাস করতে পারেনি ছাত্র/ছাত্রীরা। সরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কারো ব্যক্তিগত ইচ্ছে শক্তিতে চলতে পারে না। এজন্য দায়িত্ব অবহেলা করার অপরাধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, চাবি হারানোর অজুহাতে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক। এজন্য প্রধান শিক্ষিকা রীমা আকতারকে ওএসডি করা হয়েছে এবং সহকারী শিক্ষিকা কলি আকতারকে ব্রাহ্মণকান্দা বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে।
স্থানীয় অবিভাবক রবিন মুন্সি জানান, প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় মেয়ে বলে গত ৩দিন ধরে ক্লাস বন্ধ রাখেছেন। ছাত্র/ছাত্রীরা উপবৃত্তির কোন টাকা পায় না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রধান শিক্ষিকা লিমা আক্তার জানান, আমার শিক্ষিকারা একজোট হয়ে লাইব্রেরী থেকে চাবি লুকিয়ে রেখে আমাকে দোষী বানিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রের করছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। চারজন শিক্ষিকা আমার বিরুদ্ধে যে অপবাদ দিয়ে এসব কাজ করছে তাদের সহযোগীয় আমার এলাকার কয়েকজন অভিভাবক রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আজিমউদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যম বিষয়টি জানার পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আমার কথা হয় এবং ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান।