শনিবার(২৬ সেপ্টেম্বর) ২০২০ এর নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে ওয়েবিনারের আসরে অমর্ত্য সেন শিক্ষা দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, প্রাচীন ভারতের শিক্ষা দর্শন বা প্রকৃত শিক্ষার আদর্শ অনুসরণ মানে কি প্রাচীন ভারতের একটি দিক তুলে ধরা? প্রাচীন ভারতের আদর্শ বলতে শুধু সনাতন শিক্ষার কথা মনে রাখব, কিন্তু ভারতের সামগ্রিক ইতিহাসের ধারা উপেক্ষা করব, এটা ঠিক নয়।
ভারতের ভাবাদর্শের এই বহমানতা প্রসঙ্গে চার্বাক দর্শন থেকে মুসলিম প্রভাবের কথাও বলেন অমর্ত্য।
তিনি বলেন, প্রাচীন ভারতে সনাতন ধর্ম যেমন ছিল, তেমনই লোকায়ত বা চার্বাকের পরম্পরাও ছিল। তার মধ্যে ঈশ্বরহীনতা, ধর্মহীনতা বা ধর্মবিরোধিতা এবং সম্পূর্ণ যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া কখনও সেই আদর্শের একটি ধারার প্রতি একনিষ্ঠ থাকা নয়। পশ্চিমি দেশগুলির স্কুলশিক্ষা শুধু বাইবেলের গসপেল আঁকড়ে বসে থাকা নয়, গ্যালিলিয়োর মতো বিজ্ঞানীদের কথাও তাতে গুরুত্বপূর্ণ। এরই সূত্র ধরে তিনি আরও বলেন, এ দেশে মুসলিম প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন শিক্ষা নীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা বা অঙ্গনবাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্রটি অত্যন্ত করুণ। এ দেশের স্কুলস্তরে বেসরকারি শিক্ষার দিকে ঝোঁকের প্রবণতা নিয়েও অমর্ত্য আক্ষেপ করেছেন।
তিনি বলেন,পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ছাড়া বাকি প্রায় সব দেশের থেকেই বেসরকারি স্কুলশিক্ষার দিকে ঝোঁক বেশি ভারতের। অমর্ত্যর মতে, ‘‘শিক্ষা বেসরকারি স্কুলনির্ভর হলে, তা পণ্য হয়ে ওঠে। সরকারি পরিষেবা বা নাগরিকের অধিকার থাকে না। এই বিষয়টা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তো বটেই, জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া, চীন সকলেই বুঝেছে। সরকারি স্কুলের নেটওয়ার্ক গড়ার কাজটা খুব জরুরি।
এ সময় শিক্ষা নীতি-সংক্রান্ত আলোচনায় প্রধানত প্রাথমিক ও প্রাক-স্কুল স্তরের শিক্ষা নিয়েই কথা বলেন শিক্ষাবিদেরা।