ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo পানছড়ির জিয়ানগরে ভোট ফর ওয়াদুদ ভূইয়া-ভোট ফর ধানের শীষ ক্যাম্পেইন অনুষ্টিত Logo সব সরকারি কলেজে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন, পরীক্ষাও স্থগিত Logo ১৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা Logo জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করল বাংলাদেশ Logo শান্তি সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত Logo আমেরিকান দূতাবাসের সামনে হঠাৎ নিরাপত্তা জোরদার Logo বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ আজিজ মিয়ার শেষ বিদায়ে হাজার মানুষের ঢল Logo ঝালকাঠিতে এ্যাড. শাহাদাৎ হোসেনের গণসংযোগ Logo ঈশ্বরগঞ্জে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে সচেতনতামূলক মহড়া Logo রাজাপুরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালন র‌্যালি, আলোচনা সভা ও মহড়া অনুষ্ঠিত

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন: বাইডেনোমিক্সের ভালো-মন্দ, কী হবে কী হবে না

News Editor
  • আপডেট সময় : ১২:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০
  • / ১০৫৭ বার পড়া হয়েছে

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধান দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। এদিন ট্রাম্প ছিলেন অনেকটাই ঝগড়াটে মেজাজে। আর বাইডেন দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তের নিয়ে যাওয়ায় দায় চাপিয়ে কাবু করতে চাচ্ছিলেন প্রতিপক্ষকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আশা করেছিলেন, বাইডেনকে বামপন্থীদের সামনে দুর্বল এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর নেতা হিসেবে উপস্থাপন করলে প্রতিপক্ষের মুখে চূড়ান্ত আঘাত হানা হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, তার এধরনের অভিযোগ অনেকটাই ভিত্তিহীন। বাইডেন ইতোমধ্যেই বামদের ভাববাদী পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্যাক্স ও সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও তার প্রস্তাব বেশ গ্রহণযোগ্য। ভঙ্গুর অবকাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্দশার মতো প্রধান যেসব সমস্যার মুখে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেগুলোকেই আগে সমাধানের পরিকল্পনা করছেন এ ডেমোক্র্যাট নেতা।

২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর বড় বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাদের জন্য ওভাল অফিসে সরাসরি হটলাইন চালু ও ট্যাক্সছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। করোনাভাইরাস আঘাত হানার আগে সব ঠিকঠাকই চলছিল। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, শেয়ারবাজার ভালো ছিল, দরিদ্রতম কর্মীদের মজুরি বাড়ছিল ২০০৮ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ হারে। ভোটাররা সাধারণত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকেই বেশি গুরুত্ব দেন। সেক্ষেত্রে, মহামারি না আসলে হয়তো দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে তেমন একটা সমস্যা হতো না ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

এবার করোনায় আক্রান্ত ট্রাম্প ও মেলানিয়া

তবে মহামারির কারণেই বলা যায় ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো ফুলেফেঁপে উঠছে, সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, অবকাঠামোও ভেঙে পড়তে বসেছে। ব্যবসায়িক গতিশীলতা এখনও বহুদূর। বিনিয়োগ থমকে আছে, নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হচ্ছে কম, ধাক্কা লেগেছে বড় ব্যবসাতেও। জনসম্মুখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা, আইনি ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ- ট্রাম্পের এ ধরনের কর্মকাণ্ডগুলোর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা অস্থিতিশীল করে তুললেও চীনের সঙ্গে বিরোধের কারণে তা কিছুটা ঢাকা পড়ে গেছে।

জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে শুধু দক্ষ প্রশাসক হয়েই বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এই গুণ ২০২১ সালে খুবই দরকার। প্রেসিডেন্ট হলে বাইডেনের প্রধান লক্ষ্য থাকবে দুই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ‘পুনরুদ্ধার বিল’ পাস করানো। এর আওতায় স্বল্পমেয়াদী অর্থসহায়তা, বেকারত্ব ভাতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারগুলোকে সহায়তার মতো উদ্যোগ থাকতে পারে। বাইডেন ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলের জন্যেও সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে পারেন, যারা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো অতটা সাহায্য পায় না। তিনি চীনের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করবেন। আর ভ্যাকসিন এসে গেলে বিশ্বব্যাপী বিতরণে সাহায্য করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন।

এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বড় অংকের বিনিয়োগের অনুমোদন দিতে পারেন এ ডেমোক্র্যাট নেতা। ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি থাকলেও আজ তা নেমে এসেছে ০.৭ শতাংশে। এটিকে আবারও সন্তোষজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করবেন বাইডেন।

বলা চলে, এগুলোর বেশিরভাগই বামপন্থী সমাজবাদীদের এজেন্ডা নয়। তাদের সবার জন্য মেডিকেয়ার, পারমাণবিক শক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা, সুনিশ্চিত চাকরির মতো দাবিগুলো উপেক্ষা করেছেন জো বাইডেন। এরপরও তার আর্থিক নীতি বা বাইডেনোমিক্স নিয়ে এখনও শঙ্কা রয়েছে অনেকের।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, বাস্তববাদী দর্শন বাইডেনকে যথেষ্ট পরিমাণে সাহসী হতে দেবে না। আর সাহসিকতার অভাব মানে পরিপূর্ণ পরিকল্পনা না থাকা। বাইডেন মুক্তবাণিজ্যে বিশ্বাসী হলেও খুব শিগগিরই তিনি শুল্ক মওকুফ করতে পারবেন না। এছাড়া, সুরক্ষাবাদের ছায়াও রয়েছে তার মধ্যে। যেমন- পণ্য পরিবহনে তিনি শুধু মার্কিন নৌযান ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এসবে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হয়ে উঠতে পারে।

তবে সবার আগে নভেম্বরের নির্বাচনে জিততে হবে বাইডেনকে। আর যদি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে চান, তবে অবশ্যই বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে তাকে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন: বাইডেনোমিক্সের ভালো-মন্দ, কী হবে কী হবে না

আপডেট সময় : ১২:৩৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধান দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। এদিন ট্রাম্প ছিলেন অনেকটাই ঝগড়াটে মেজাজে। আর বাইডেন দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তের নিয়ে যাওয়ায় দায় চাপিয়ে কাবু করতে চাচ্ছিলেন প্রতিপক্ষকে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আশা করেছিলেন, বাইডেনকে বামপন্থীদের সামনে দুর্বল এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর নেতা হিসেবে উপস্থাপন করলে প্রতিপক্ষের মুখে চূড়ান্ত আঘাত হানা হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, তার এধরনের অভিযোগ অনেকটাই ভিত্তিহীন। বাইডেন ইতোমধ্যেই বামদের ভাববাদী পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্যাক্স ও সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও তার প্রস্তাব বেশ গ্রহণযোগ্য। ভঙ্গুর অবকাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্দশার মতো প্রধান যেসব সমস্যার মুখে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেগুলোকেই আগে সমাধানের পরিকল্পনা করছেন এ ডেমোক্র্যাট নেতা।

২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর বড় বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাদের জন্য ওভাল অফিসে সরাসরি হটলাইন চালু ও ট্যাক্সছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। করোনাভাইরাস আঘাত হানার আগে সব ঠিকঠাকই চলছিল। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, শেয়ারবাজার ভালো ছিল, দরিদ্রতম কর্মীদের মজুরি বাড়ছিল ২০০৮ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ হারে। ভোটাররা সাধারণত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকেই বেশি গুরুত্ব দেন। সেক্ষেত্রে, মহামারি না আসলে হয়তো দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে তেমন একটা সমস্যা হতো না ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

এবার করোনায় আক্রান্ত ট্রাম্প ও মেলানিয়া

তবে মহামারির কারণেই বলা যায় ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো ফুলেফেঁপে উঠছে, সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, অবকাঠামোও ভেঙে পড়তে বসেছে। ব্যবসায়িক গতিশীলতা এখনও বহুদূর। বিনিয়োগ থমকে আছে, নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হচ্ছে কম, ধাক্কা লেগেছে বড় ব্যবসাতেও। জনসম্মুখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা, আইনি ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ- ট্রাম্পের এ ধরনের কর্মকাণ্ডগুলোর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা অস্থিতিশীল করে তুললেও চীনের সঙ্গে বিরোধের কারণে তা কিছুটা ঢাকা পড়ে গেছে।

জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে শুধু দক্ষ প্রশাসক হয়েই বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এই গুণ ২০২১ সালে খুবই দরকার। প্রেসিডেন্ট হলে বাইডেনের প্রধান লক্ষ্য থাকবে দুই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ‘পুনরুদ্ধার বিল’ পাস করানো। এর আওতায় স্বল্পমেয়াদী অর্থসহায়তা, বেকারত্ব ভাতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারগুলোকে সহায়তার মতো উদ্যোগ থাকতে পারে। বাইডেন ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলের জন্যেও সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে পারেন, যারা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো অতটা সাহায্য পায় না। তিনি চীনের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করবেন। আর ভ্যাকসিন এসে গেলে বিশ্বব্যাপী বিতরণে সাহায্য করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন।

এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বড় অংকের বিনিয়োগের অনুমোদন দিতে পারেন এ ডেমোক্র্যাট নেতা। ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি থাকলেও আজ তা নেমে এসেছে ০.৭ শতাংশে। এটিকে আবারও সন্তোষজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করবেন বাইডেন।

বলা চলে, এগুলোর বেশিরভাগই বামপন্থী সমাজবাদীদের এজেন্ডা নয়। তাদের সবার জন্য মেডিকেয়ার, পারমাণবিক শক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা, সুনিশ্চিত চাকরির মতো দাবিগুলো উপেক্ষা করেছেন জো বাইডেন। এরপরও তার আর্থিক নীতি বা বাইডেনোমিক্স নিয়ে এখনও শঙ্কা রয়েছে অনেকের।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, বাস্তববাদী দর্শন বাইডেনকে যথেষ্ট পরিমাণে সাহসী হতে দেবে না। আর সাহসিকতার অভাব মানে পরিপূর্ণ পরিকল্পনা না থাকা। বাইডেন মুক্তবাণিজ্যে বিশ্বাসী হলেও খুব শিগগিরই তিনি শুল্ক মওকুফ করতে পারবেন না। এছাড়া, সুরক্ষাবাদের ছায়াও রয়েছে তার মধ্যে। যেমন- পণ্য পরিবহনে তিনি শুধু মার্কিন নৌযান ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এসবে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হয়ে উঠতে পারে।

তবে সবার আগে নভেম্বরের নির্বাচনে জিততে হবে বাইডেনকে। আর যদি অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে চান, তবে অবশ্যই বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে তাকে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট