গত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় চীনের জন্য অর্থনৈতিক দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মাধ্যমে চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের ও বৈশ্বিক গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্য যুদ্ধ চালিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। শুধু তাই নয় করোনা মহামারির জন্য একমাত্র বেইজিংই দায়ী বলে মনে করেন ট্রাম্প।
কিন্তু এতো কিছুর পরও ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয় চাইছে চীন। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের জয় হলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার দেশকে বৈশ্বিক সুপার পাওয়ার হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
বাকনিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ঝু ঝিকান বলেন, ‘চীনের নেতৃত্ব বিশ্বায়ন, বহুপাক্ষিকতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এর বৈশ্বিক অবস্থানকে জোরদারের সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।’
ট্রাম্প এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তি ও জলবায়ু চুক্তি থেকে থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, চীনা পণ্যের ওপর শত কোটি ডলারের কর আরোপ করেছেন এবং যখন বিশ্ব করোনা মহামারিকে মোকাবিলা করছে তখন তিনি তার দেশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
ভারতের প্রত্যেক নাগরিক পাবে করোনার ভ্যাকসিন, আশ্বাস মোদির
অপরদিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার দেশকে মুক্তবাণিজ্যের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এবং নিজেকে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতা উপস্থাপন করেছেন। দরিদ্র দেশগুলোর সঙ্গে করোনার টিকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ঝু ঝিকান বলেন, ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ হয়তো চীনকে বিশ্বমঞ্চে সুপার পাওয়ার হিসেবে বেড়ে ওঠার আরও সময় দেবে।’
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের চীন বিশেষজ্ঞ ফিলিপ লি করি জানান, ট্রাম্পে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি বেইজিংয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা এনে দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এটি আংশিকভাবে ওয়াশিংটনকে তার ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এবং চীনকে আরও কৌশুলি হওয়ার সুযোগ করে দেবে।’
অপরদিকে, ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হলে তিনি হয়তো চীনা পণ্যে ট্রাম্পের করনীতি থেকে সরে আসবেন না। আবার উইঘুর, তিব্বতের মানবাধিকার এবং হংকংয়ের স্বাধীনতার জন্য বেইজিংয়ের ওপর চাপপ্রয়োগ করবেন। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের এই হস্তক্ষেপ চীনের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হবে না।
অধ্যাপক ঝু বলেন, ‘শিনজিয়াং ও তিব্বতের মানবাধিকার ইস্যুতে ট্রাম্পের চেয়েও কঠোর হতে পারেন বাইডেন।’
সার্বিক বিবেচনায় তাই বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পের বিজয়ই চীনের কাছে কাম্য।
সেদিকেই ইঙ্গিত করে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে চীনের গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু শিজিন বলেছেন, ‘আপনি বিশ্বের জন্য আমেরিকাকে খামখেয়ালীপূর্ণ ও ঘৃনিত হিসেবে তৈরি করতে পারবেন। আপনি চীনের ঐক্য প্রচারে সহায়তা করছেন।’