রিয়াজুল হক সাগর। রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে হারাগাছ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যানটারী সারাই হরিণটারী জুম্মাপাড় জামে মসজিদের কাছে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত নাজমুল হক নজু সারাই জুম্মাপাড় এলাকার আবুল হকের ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি বিড়ির কারখানায় চাকরি করতেন। নাজমুলের বাড়ি সৎবাজার এলাকায় হলেও তিনি চেয়ারম্যানটারী গ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।
এলাকাবাসী ও প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানটারি জুম্মাপাড় জামে মসজিদের উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন কমিটির সদস্যরা মুসল্লিসহ স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছিলেন। এর মধ্যে চাঁদার শতকরা ২৫ শতাংশ টাকা আদায়কারীরা নিতেন। এই টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর নতুন কমিটির সদস্য আব্দুল বারী ভেল্লুর (৫২) সঙ্গে পুরাতন কমিটির সদস্য নুর আলমের ভাই দয়াল মিয়ার (৩৮) বাগবিতণ্ডা হয়।
পরে মাগরিবের নামাজ শেষে আবারও দুই পক্ষের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় সাধারণ মুসল্লিরা তাদেরকে শান্ত করেন। পরে মসজিদ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে ভেল্লুর দুই ছেলে রিপন ও জীবনসহ কয়েকজন মিলে দয়াল ও তার পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।
এ ঘটনাটি জানাজানি হলে উভয় পরিবারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে নাজমুল হক (৪৫), দয়াল মিয়া (৩৮) ও নুর আলম আহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় নাজমুল হককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা ভেলুর বাড়ি ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। তবে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ায় আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ভেল্লু মিয়া (৫২), তার স্ত্রী স্বপ্না (৪২) ও দুই ছেলে রিপন মিয়া (১৮) এবং জীবন মিয়াকে (১৬) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।
হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হক এরশাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। পুলিশ পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। তবে মসজিদের টাকা আদায় নিয়ে এ ধরনের সংঘাত দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েক মাস ধরে মসজিদের চাঁদার টাকা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু সেই টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়নি। এ নিয়ে চাঁদা আদায়কারীদের সঙ্গে পূর্বের কমিটির সদস্যদের মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু আজকের মারামারি এবং নাজমুল হকের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। লকডাউনের কারণে বাইরে বের না হওয়ায় ঘটনাটি আমি রাতে মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছি।
রংপুর মহানগর পুলিশের হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আটক কারিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।