ডেস্ক নিউজ:
করোনায় মানুষের ঘরবন্দি দশা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাজধানীতে ফের বিশৃঙ্খলায় সড়ক। শুধু রাজধানীই নয় সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা। আর প্রাণহানির বড় কারণ বেপরোয়া মোটরসাইকেল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে প্রায় ৩০ ভাগ দুর্ঘটনাই মোটরসাইকেল আরোহীর ঘন ঘন লেন পরিবর্তন এবং নিয়ম না জানা বা জেনেও না মানার ফলেই দুর্ঘটনা হচ্ছে।
সরেজমিনে গত কয়েকদিন রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, উত্তরা, বনানী, মহাখালী, মিরপুর, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে। অপরদিকে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটরসাইকেল সবাই যেন নিয়ম ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সিগনাল থাকলেও মানতে নারাজ তারা।
কবির হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, চালকদের পাশাপাশি পথচারীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একটু সামনে ফুট ওভারব্রিজ থাকলেও কেউ তা ব্যবহার করছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন সবাই।
রাজধানীর খিলক্ষেতে ডিউটিরত সার্জেন্ট জসিম উদ্দিন বলেন, পথচারী ও রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু কে শোনে কার কথা। মোটরসাইকেল চালকরা নিয়ম না মেনেই ফাঁক ফোঁকর পেলেই ঢুকে পরেন, এতে করে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
এদিকে হাসান নামের এক মোটরসাইকেল চালক বাস চালককে দোষারোপ করে বলেন, বাস চালাকরা ডানে-বামে না দেখেই হুট করে রিকশা ও মোটর সাইকেলকে চাপা দেয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। অপরদিকে মোটরসাইকেল চালককে এক বাস চালক বলেন, মোটরসাইকেল চালকরা নিয়ম না মেনে বেপরোয়াভাবে রাস্তায় চলাচল করে। ওদের কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে দেশে ৪ হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৩১ জন নিহত এবং ৭ হাজার ৩৭৯ জন আহত হয়েছেন। ১ হাজার ৩৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৬৩ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহত মানুষের ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা এবং অসাবধানতাই এসব দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা গত চার বছরে বেড়েছে চারগুণ। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ হাজার ২৫৮ জন। এর মধ্যে এক হাজার ৫৭ জনই মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, রাজধানীসহ সারাদেশে উন্নতমানের বাস সার্ভিস চালু করলেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সড়কে আগের থেকে অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরেছে। মোটরসাইকেল চালক ও পথচারীরা সচেতন হলে দ্রুত সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।
এদিকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে দেয়া ১১১টি সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করলে দুর্ঘটনা কমে যাবে বলে মনে করেন দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ।