কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে অসংখ্য পরিবার
মাসুদ পারভেজঃ
মহামারি করোনার অর্থনৈতিক প্রতিঘাতে সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দারিদ্র্যের হার বাড়ছে হু হু করে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। লকডাউনে দোকান পাট বন্ধ থাকা, কাজের পরিধি হ্রাস পাওয়া, আন্তজার্তিক শ্রম বাজারে মান্দা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারায় উপজেলায় অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। কাজ না থাকায় তারা দারুণ কষ্টে দিনাপতিত করছে।
চাউলসহ বেশিরভাগ দ্রব্যমূল্যের চড়া দামে রমজানে দু’বেলার পরিবর্তে এক বেলে খেয়ে রোজা রাখছে অসহায় ছিন্নমূল মানুষেরা। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম, হাসান আলি, মামুন হোসেন সহ অনেকেই জানালেন তাদের সিমাহীন দুর্ভোগের কথা।
সাড়ে ২৩ লক্ষ মানুষের বসবাস সাতক্ষীরা জেলাতে। আর কালিগঞ্জ উপজেলায় ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষের বসবাস। রাজনৈতিক জটিলতাসহ নানা করণে উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রম বরাবরই পিছিয়ে রয়েছে। ফলে কিছু সংখ্যক মানুষের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন হলেও সাধারণ মানুষ জীবন যাত্রার তেমন উন্নয়ন হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শরিফুল ইসলাম উপজেলার মৌতলাা ইউনিয়নে খানপাড়া বসবাাস করে, বয়স পড়েছে। ৬০ উর্দ্ধ এ মানুষটি শ্রম বিক্রি করে সংসার চালাতে সকাল থেকে সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা থাকার পর কোন দিন কাজ হয় আবার কোন দিন কাজ হয় না। বর্তমানে লকডাউনের কারণে তার কাজ হচ্ছে না। কাজ না পেয়ে অসহায় ভাবে খালি হাতে তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।
তিনি জানান, দু:খের কথা কি বলবো। শুনার কেউ নেই। জানিনা আগামি দিন গুলি কি ভাবে চালাবো।
মোতালেব হোসেন। ৪০ বছর ধরে তিনি শ্রম বিক্রি করে সংসার চালান। বর্তমানে তার বয়স ৭০ বছর। বয়সভারেও তিনি স্বাচ্ছন্দে শ্রমের মাধ্যমে প্রতি দিন ২ থেকে ৩শ টাকা উপার্জন করে সংসার চালান। কিন্তু লকডাউনের কারণে শ্রমিকের চাহিদা কম থাকায় তাদেরও হাতে কাজ নেই। একই অবস্থা এ উপজেলার হাজারো মানুষের। কথা হয় তাদের সাথে। একটাই অভিযোগ তাদের কাজ চাই। কাজ না পেলে সংসার চালাবো কি করে। তাদের পাশে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার জানালেন সুশীল সমাজ।
কালিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাজিমগঞ্জ বাজারের রাজ শপিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী রুমি জানান, এই লকডাউনে তাদের বেচাকেনার অবস্থা খুবই দুঃখজনক, কয়েকদিন পরেই ঈদ এই লকডাউন এর কারণে ঈদের কেনাবেচা তাদের হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আমি আমার সংসার ভালোভাবে চালাতে না পারলেও কোনমতে চালিয়ে নিচ্ছি, কিন্তু আমার দোকানে থাকা ৫-৭ জন কর্মচারী খুবই অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমি ইতিমধ্যে কিছু আর্থিক সহযোগিতা তাদেরকে করেছি কিন্তু তাতেও তাদের অভাব-অনটন মিটছে না। দিন আনা দিন খাওয়া এই শ্রমিকেরা যদি ঠিকমতো ব্যবসা-বাণিজ্য না করতে পারে তাহলে অনাহারে তাদেরকে মরতে হবে।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, বলেন সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না আসায় মানবিক কারণে আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনেক হতদরিদ্র, দিন মজুর, শ্রমিক, ভ্যানচালক সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য করে কিছুটা হলেও মানুষের অভাব মেটানোর চেষ্টা করেছি মাত্র।
আমার উপজেলার মানুষ বেশিরভাগ লেপ-তোষক ব্যবসায়ী এবং ইটভাটা শ্রমিক যার কারণে তাদের বছরের অধিকাংশ সময় জেলার বাইরে শ্রমিক সন্ধানে যেতে হয়। কিন্তু এই লকডাউন এর কারণে তাদের কর্মস্থল ছেড়ে বাড়ি চলে আসতে হয়েছে, ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে করোনা সংক্রমনের আশংকা তেমনি অন্যদিকে বাড়ছে রিদ্রতার হার।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই সহায়তা প্রত্যেকটা অসহায় পরিবারের কাছে পৌঁছে যাবে।
তিনি সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।