লৌহজংয়ে শোষিত অটো চালকেরা
আ স ম আবু তালেব/লৌহজং প্রতিনিধিঃ
ডিজিটাল বাংলাদেশ। দিন বদলের পালা হলেও মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে অটো চালকদের ভাগ্যের বদল ঘটেনি। সরকারি নীতিমালা না থাকায় দিন দিন মালিক ও গ্যারেজ মালিক কর্তৃক শোষিত হচ্ছে চালকরা। গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক বের করার পর যাত্রী কম থাকায় জমার টাকা না হলেও গাড়ির মালিককে ৩শ টাকা ও বিদ্যুৎ না থাকায় পরিপূর্ণ চার্জ না হওয়ায় গ্যারেজ মালিককে বাধ্যতামূলক ২শ টাকা জমা দিতে হচ্ছে। মিশুক এবং অটোরিকশার জমা এবং গ্যারেজ ভাড়া কম হলেও তারা একইভাবে শোষিত হচ্ছে। অর্ধাহারে অনাহারে থাকা এসব অটো চালকদের খবর কেউ রাখেনা।
গ্যারেজের ম্যানেজারকেও দৈনিক ১০ টাকা করে দিতে হয়। তা নাহলে রাতে চার্জার খুলে রেখে ভোর রাতে চার্জে লাগিয়ে দেয়। ফলে পরিপূর্ণ চার্জ হয় না। এর কারণ জানতে চাইলে লুস কালেকশন ছিল বলে ইজিবাইক শ্রমিকদের মিথ্যে কথা বলে। আমাদের প্রতিনিধিকে এই অভিযোগ তুলে ধরেন ইজিবাইক শ্রমিক আব্দুল্লাহ। তিনি দূঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে। গ্যারেজের মালিকেরা চার্জ বিল বাবদ কতো টাকা নির্ধারণ করে তা কি জানা নেই কারো।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার আনাচে-কানাচে প্রতারকচক্র নকল কারখানা দিয়ে ইজিবাইক, মিশুক এবং অটোরিক্সার নিম্নমানের যন্ত্রাংশ বানাচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতারা এসব নিম্নমানের যন্ত্রাংশ স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ছে। অপরদিকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্রেতারা। গাড়িতে এসব নিম্নমানের যন্ত্রাংশ লাগালে কয়েক দিন পরই আবার নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া রাস্তায় প্রায় প্রতিদিন ধারালো পাথরের কণার আঘাতে যানবাহনের দ্রুত টায়ার ক্ষয় ও টিউব ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ইজিবাইক, মিশুক ও অটো রিক্সার টায়ার-টিউবের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উক্ত ছোট ছোট যানের শ্রমিকেরা। টিউব পাংচার হলে চালকদের নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ঠিক করতে হয়, সময়ও অপচয় হওয়াতে নিজ সংসারে টাকা নেওয়া দূরের কথা গাড়ির জমা টাকা সেদিন আয় করা যায়না।
মুন্সীগঞ্জেরর প্রতিটি থানায় প্রশাসনের নির্দেশে হরেকরকম রং করেও ইজিবাইক চুরি ঠেকানো যাচ্ছেনা। উপজেলায় ইজিবাইক ও মিশুকের চুরি ঠেকাতে প্রশাসনের নির্দেশে ১ হাজার-১২শ টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ইজিবাইক ও মিশুকে ভিন্ন ভিন্ন নির্ধারিত রং করে এবং প্লেট নাম্বার দিয়ে চুরি ঠেকানো যাচ্ছেনা। ক’দিন পর পরই ইজিবাইক কিংবা মিশুকের চালককে বেশি টাকা দিয়ে ভাড়া করে নির্জনে নিয়ে নেশা জাতীয় ওষুধ মিশ্রিত পানীয় অথবা নাকে স্প্রে ব্যবহার করে চালককে অজ্ঞান গাড়ি নিয়ে নির্বিঘ্নে কেটে পড়ছে। চোর মাঝে মাঝে গ্রেপ্তার হলেও জামিন পেয়ে পূণরায় ইজিবাইক ও মিশুক চুরিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
ইজিবাইক শ্রমিক ফজল আহমেদ জানান, অনেক শিক্ষিত তরুণরাও বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে ইজিবাইক ক্রয় করে নিজেই চালাচ্ছে বা ভাড়া দিচ্ছে। এতে ইজিবাইক মিশুকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছেনা যাত্রীর সংখ্যা। সরকারি নীতিমালা না থাকায় ভাড়া বাড়ানো যাচ্ছেনা। ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা করলে যাত্রী কর্তৃক লাঞ্চিত হতে হয়। এমনকি আমাদের বিরুদ্ধে প্রাশসনিক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। ইজিবাইকের মালিককে দৈনিক ৩শ টাকা ও গ্যারেজ মালিককে দৈনিক ২শ টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়া লেখা, চিকিৎসার খরচ ও নিত্য প্রয়োজনী পণ্য কেনা এখন আর সম্ভব হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে তিনি অটো চালকদের স্বার্থে সরকারি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।