DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশনিবার ১৯শে জুলাই ২০২৫
ঢাকাশনিবার ১৯শে জুলাই ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্কুলশিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়া নেন না সুসময়

Astha Desk
মার্চ ২৩, ২০২৪ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

স্কুলশিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়া নেন না সুসময়

 

মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছ:

পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের যানবাহন পেতে কষ্ট হয়। ভাড়া কম পাবেন দেখে শিক্ষার্থীদের গাড়িতে তুলতেও খুব আগ্রহী নন চালকরা। তবে ব্যতিক্রম সুসময় চাকমা। তিনি একজন সিএনজিচালিত রিকশার চালক।

খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা, সাজেকসহ বিভিন্ন সড়কে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালান। তবে যাত্রাপথে কোন শিক্ষার্থীকে দেখলে বিনা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। কখনো স্কুলে যেতে, কখনো বা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, যাদের অর্থ নেই তাদেরও গন্তব্যে পৌঁছে দেন।

এমনকি বিশেষ দিনে বিনামূল্যে যাত্রী পরিবহন করেন সুসময়। শুধু শিক্ষার্থী পরিবহনই নয়, তাদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি আদর্শ মানুষ হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা সুসময় চাকমা নেটিজেনদের প্রশংসায় ভাসছেন।

গত মঙ্গলবার (১৯মার্চ) সুসময় চাকমা বলেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে পাহাড়, ছড়া পেরিয়ে প্রধান সড়কে আসে। তারপর আবার গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। আর সব গাড়ি শিক্ষার্থীদের নিতেও চায় না। এসব দেখে আমার অনেক মায়া হয়। তাই গাড়ি চালানোর সময় সড়কের পাশে স্কুলড্রেস পরা শিক্ষার্থী দেখলে আমি বিনা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই।

স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুসময়ের সংসার। বড় ছেলে সৌম্মক সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ে ইয়ানার বয়স চার বছর।

স্নাতক সম্পন্ন করা সুসময় চাকমা ঢাকার একটি স্বনামধন্য গার্মেন্টস ফ্যাকটরিতে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে থাকতেন ঢাকায় থাকতেন।

২০২১ সালে বাবা ভুবন মোহন চাকমার মৃত্যুর পর মা নোনাভি চাকমা একা হয়ে যান। সবশেষ ২০২২ সালে মায়ের জন্য ৭০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে খাগড়াছড়িতে স্থায়ী হন।

সুসময় চাকমা বলেন, মা একা হয়ে যাওয়ায় চাকরি ছেড়ে খাগড়াছড়ি এসে গার্মেন্টসের কাপড় বিক্রির পরিকল্পনা করি। কিন্তু পর্যাপ্ত পুঁজি না থাকায় অর্থের অভাবে আর সামনে যেতে পারিনি। তাই মাহিন্দ্রা (থ্রি হুইলার) কিনে সংসারের হাল ধরি। এখন গাড়ি চালিয়ে দৈনিক গড়ে দেড় হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করি। ২০২৩ সালে ঘর থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা চুরি হয়ে যায়। নিজ ঘরের অর্ধেক কাজ করে সমাপ্ত করতে পারিনি। এখন ভাড়া বাসায় থাকি।

আরো পড়ুন :  পানছড়ির লোগাং-এ মাদ্রাসা ও হিফজখানা লিল্লাহ বোর্ডিং উদ্বোধন

সুসময়ের বিনা ভাড়ার সুবিধা শুধু শিক্ষার্থী নয়; পর্যটকসহ সব পেশার মানুষ পেয়েছেন। প্রতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন তিনি বিনা ভাড়ায় সারাদিন গাড়ি চালিয়ে থাকেন। সেদিন তার গাড়িতে যে যাত্রীরা ওঠেন, কারো কাছ থেকেই তিনি ভাড়া নেন না। আর প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের জন্য রয়েছে তার বিশেষ মায়া।

সুসময় চাকমা বলেন, আমাদের পাহাড়ের ছেলেমেয়েরা অনেক সংগ্রাম করে পড়াশোনা করে। ভালো খাবার খেতে পারে না। ভালো পোশাক নেই। শিক্ষাই তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে। তাই আমার গাড়িতে যখন শিক্ষার্থীরা ওঠে, তাদের পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে আদর্শ মানুষ হতে বলি। গাড়িভাড়ার টাকা দিয়ে তাদের কিছু কিনে খেতে বলি। তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে আমিও আনন্দ পাই। আমি চাই, অন্যরাও সাধ্যমতো পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের পাশে থাকুক।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
[prayer_time]