হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী ও দলের দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে থেকে যারা নানামুখী অপরাধের সাথে যুক্ত তাদের বাদ নিয়ে শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই সাথে তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী, পরিশ্রমী এবং দুর্দিনে বিরোধী শিবিরের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, নতুন কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে কঠোর বার্তা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
উপ-নির্বাচনে আ.লীগ প্রার্থীর পথসভায় ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৩
করোনা সংকটে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদেরও দলে ঠাঁই দিতে বলেছেন তিনি। গতকাল শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা এমনটাই নিশ্চিত করে জানান, বৈঠকে ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন, মেধাবীদের স্থান দিয়ে শুদ্ধ তৃণমূল আওয়ামী লীগ গঠনে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কোনোভাবেই দলের মধ্যে হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিতদের দেখতে চান না তিনি।
যারা বিতর্কিতদের লালন-পালন করেন, তাদের চিহ্নিত করাসহ বলয়মুক্ত সংগঠন গঠনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন। এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথাও সমস্যা হলে সরাসরি তাকে অবহিত করার জন্য দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
আ.লীগ সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। বৈশ্বিক মহামারি করোনা কারণে দীর্ঘ সাত মাস পর গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভা করে ক্ষমতাসীন দলটি।
দীর্ঘদিন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে গুরুত্ব পায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। বিশেষ করে জেলা, মহানগর, উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন এবং বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব গঠন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে কথা বলেন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটিতে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বেশ কিছু সম্পাদকীয় পদে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তারা অনেকেই ঢাকার ভোটার নন। ভোটের সময় তাদের পাওয়া যায় না। নিজ নিজ এলাকায় চলে যান।
এতে করে ভোটের সময় সংকট সৃষ্টি হয়।’ কমিটিতে ঢাকার ভোটারদের প্রাধান্য দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এসময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ও ত্যাগীদের দিয়ে কমিটি করতে হবে। অনেক জেলায় সমস্যা রয়েছে।
সেগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে হবে। নিজের নেতার মাইম্যান বা এমপিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কমিটি করা যাবে না। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ঢাকা বিভাগের আওয়ামী লীগের নাজুক অবস্থার কথা তুলে ধরেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিভাগ। বিশেষ করে ঢাকা শহরে বেশি সমস্যা রয়েছে। কোনো একটি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। আগামীতে কমিটি করতে হলে জেলা ছাড়া যেনো কমিটি না হয় সে জন্য দলীয়প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সম্মেলন ছাড়া কমিটি গঠন করতে নিষেধ করেন।
তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে।’ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির নেতাদের ডেকে পাননি বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘তাদেরকে বারবার ডাকলেও সাড়া দেয়নি। সে কারণে প্রতিটি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।’ এসময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে কে কোথায় কি সমস্যা ফেস করছে, সেটা আমাকে অবহিত করবে।
আমি চাই তৃণমূলে দলের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাকর্মীসহ সমাজে যারা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষজন আছে তাদেরও দলে টানতে হবে। তোমরা কাজ করতে গিয়ে কমিটি করতে গিয়ে কোথায় কি সমস্যা হচ্ছে তা আমাকে জানাবে। দলে সেক্রেটারি আছে তাকে জানাবে।’
বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের আরও শক্তিশালী করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আট বিভাগে আটটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন তিনি।
প্রত্যেক বিভাগে দু-একজন করে সভাপতিমণ্ডলী সদস্য, বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। গঠিত এই কমিটি দায়িত্বশীল নেতারা নিজ বিভাগের জমা পড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করবেন।
একই সাথে নতুন কমিটি গঠনে বিতর্কিত, নানামুখী অপরাধ ও অপকর্মের সাথে যুক্ত কেউ যেনো কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
একই সাথে দলের ত্যাগী, পরিশ্রমী এবং দুর্দিনে বিরোধী শিবিরের আন্দোলন সংগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছে তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ছয় সাংগঠকি সম্পাদক সভানেত্রীর কাছে তাদের বিভাগীয় প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ওই বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়।
এসময় শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে হাইব্রিড, বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে ছেঁটে ফেলার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছে, কমিটি হয়নি— সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যেসব জেলা-উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ সেগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে মাইম্যানদের (ব্যক্তিবলয়) বাদ দিয়ে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের স্থান দিতে কঠোর অবস্থানের কথা জানান।
সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে বিভাগীয় টিম গঠন : বৈঠকে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধি ও বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব গঠনে বিভাগীয় টিম অনুমোদন দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সমন্বয়ক দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
অন্য সদস্যরা হলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মতিন খসরু, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নির্বাহী পরিষদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদার।
রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সমন্বয়ক করা হয়েছে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে। এ টিমের অন্য সদস্যরা হলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, শাজাহান খান, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি।
রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সমন্বয়ক করা হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। অন্য সদস্যরা হলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রহমান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, প্রফেসর মেরিনা জাহান, বেগম আখতার জাহান।
খুলনা বিভাগীয় টিমের সমন্বয়ক দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। অন্য সদস্যরা হলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, শ্রম ও জনশক্তি-বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, পারভিন জামান কল্পনা, অ্যাডভোকেট গোরিয়া সরকার ঝর্ণা।
বরিশাল বিভাগীয় টিমের সমন্বয়ক দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। টিমের অন্যান্য সদস্য— দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু, আনিসুর রহমান।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের সমন্বয়ক দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। অন্য সদস্যরা হলেন— দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতি-বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মারুফা আক্তার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং।
সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সমন্বয়ক দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। অন্য সদস্যরা হলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবীর নানক, নুরুল ইসলাম নাহিদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ড. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সমন্বয়ক দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। অন্য সদস্যরা হলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ ফারুক খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, শিক্ষা ও মানবসম্পদ-বিষয়ক সম্পাদক শামসুর নাহার চাপা।
মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিল্প ও বাণিজ্য-বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।