আগে স্থানীয় নির্বাচনসহ ১৬ দাবি ইসলামী আন্দোলনের
আস্থা ডেস্কঃ
প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন বণ্টন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনসহ ১৬ দাবি জানিয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন।
আজ শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্রে এ দাবি জানানো হয়।
ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ভবিষ্যৎ স্বৈরতন্ত্র রোধ করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিতে সংস্কার কমিশনে মতামত দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। তা বিবেচনা কররত মহাসমাবেশ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।
সংস্কারের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে বাস্তবায়নের জন্য ১৬ দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো-
১. সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের সঙ্গে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি’ এ বিষয়টি অবশ্যই পুনঃস্থাপন করতে হবে।
২. সংসদের প্রস্তাবিত উভয়কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।
৩. গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে।
৪. নির্বাচিত স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ও সন্ত্রাসী শ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস করতে না পারে এবং একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনী মৌলিক রাষ্ট্রসংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
৫. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে জনপ্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। ফ্যাসিবাদেরক চিহ্নিত করে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
৬. দেশ থেকে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে সক্রিয়, কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৭. পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিতে বিদেশে পালাতক অপরাধীদের আটকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে।
৮. দেশে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও খুনখারাবি রোধে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও অবিচল হতে হবে।
৯. চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১০. ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে।
১১. জাতীয় নির্বাচনের আগে সব স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আগামীতেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন করতে হবে।
১২. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
১৩. ঘুষ, দূর্নীতিসহ সকল প্রকার নাগরিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক কারণে হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করতে হবে। হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দেশের কোথাও কোনো রকম মব সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। মব সৃষ্টিকারীদের দমনে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৪. দেশ বিরোধী ও ইসলাম বিরোধী সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবিলায় সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
১৫. স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, জনগণের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিধান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষা, সর্বত্র শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং কাঙ্ক্ষিত উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সকল পর্যায়ে ইসলামের সুমহান আদর্শের অনুশীলন করতে হবে।
১৬. জাতীয় নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও ইসলামী শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সংস্কার, বিচার, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবিতে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে জামায়াত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, দলটির নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার, সহকারী সেক্রেটার রফিকুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আকতার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মহাসমাবেশে যোগ দেয়।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূরু।
মহাসমাবেশে যোগ দেন নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের মহাসচিব, ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, বাংলাদেশ খেলাফত মহাসচিব জালাল উদ্দীন, খেলাফত আন্দোলন মহসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানি প্রমুখ।
মহাসমাবেশে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসবি গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্ত্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও যোগ দেয়।