আজ ‘ঈদ’ আতশবাজিতে আলোকিত হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃদখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি সমঝোতার পর আপাতত বন্ধ হয়েছে হামলা-সহিংসতা। ফলে প্রায় দু’সপ্তাহ পরে বুকভরে শ্বাস নিতে পারছে গাজাবাসী। দখলদারদের হামলার কারণে এবারের ঈদুল ফিতর ঠিকভাবে উদযাপন করতে পারেনি ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। তারপরও প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে গেছে তারা। তাই বিজয়ের সমান এই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ফিলিস্তিনের জনগণ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সেখানে চলছে বিজয়োল্লাস। আজকের দিনটি হয়ে উঠেছে তাদের ঈদের দিন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরপরই গাজা, পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। এসময় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নানা স্লোগান দেন তারা। খুশির আতশবাজিতে আলোকিত হয়ে ওঠে ফিলিস্তিনের আকাশ।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, যুদ্ধবিরতির পর হামাসের নেতারা ‘বিজয় ভাষণ’ শুরু করেন ঈদের খুতবা দিয়ে। তখন মঞ্চের সামনের দাঁড়িয়ে থাকা জনতাকেও ঈদের তাকবীর দিতে শোনা যায়।
ইরানি সংবাদমাধ্যম পার্স টুডের খবর অনুসারে, গাজায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা খলিল আল-হাইয়া তার ভাষণের শুরুতেই তাকবির দেন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।
এরপর সমাবেত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ আমাদের বিজয়ের ঈদ। হে সৃষ্টিকর্তা, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনি আমাদের শত্রুদের পরাজিত করে জনগণকে বিজয় দিয়েছেন। আল কুদসকে বিজয়ী করেছেন, শেখ জাররাহকে বিজয়ী করেছেন, সকল স্থানের জনগণকে বিজয় দান করেছেন।
গাজা থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার সংবাদদাতা ইয়ুমনা আল-সায়িদও জানান, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকেই ঈদের দিনের মতো আনন্দ-উদযাপন শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা।
তিনি বলেন, তারা (ফিলিস্তিনিরা) ‘আল্লাহ মহান’ বলে ব্যাপক উত্সাহের সঙ্গে উল্লাস করতে শুরু করে। তাদের জন্য আজ ঈদুল ফিতরের প্রথম দিনের মতো। রমজানের শেষের দিকে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ায় তারা আসলে ঠিকঠাক ঈদ উদযাপন করতে পারেনি।
এর আগে টানা ১১ দিন প্রাণঘাতী লড়াইয়ের পর গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দখলদার ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি হিসাব করলে ফিলিস্তিনিদের ক্ষয়ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি হলেও পশ্চিমা মদদপুষ্ট পরাক্রমশালী ইসরায়েলি বাহিনীকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা হামাসের জন্য বিজয়ের সামিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হামাসের বৈদেশিক রাজনীতি বিষয়ক প্রধান খালেদ মিশ’আল বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দম্ভ এবং মর্যাদা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের আল-আকসা টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের শীর্ষ পর্যায়ের এ নেতা বলেন, ফিলিস্তিনিদের নতুন ইন্তিফাদার (পুনর্জাগরণ) কারণে আল-কুদসের জনগণ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। গাজা উপত্যকা আজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন চিরকালের মতো বন্ধ করতে হবে এবং গত ১১ দিনে গাজা উপত্যকায় দখলদার বাহিনী যে সহিংসতা চালিয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে দাবি করেছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য এজাত আল-রশিক।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর এই নেতা ইসরায়েলকে সতর্ক করে আরও বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও তারা এখনো ট্রিগারে হাত রেখেছেন। অর্থাৎ ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করলেই তার যোগ্য জবাব দেবে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।
গত ৭ মে পবিত্র মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি মুসল্লি আল-আকসা মসজিদে সমবেত হলে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর হামলা চালায়। মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বর্বর ইসরায়েলিরা। এর দুদিন পরে পবিত্র শবে কদরেও আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে গত ১০ মে থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকা অঞ্চলটিতে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারাও রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তীব্র প্রতিরোধের মুখে অবশেষে যুদ্ধবিরতি মানতে বাধ্য হয় দখলদার ইসরায়েল সরকার।
তবে গত ১১ দিনের এই সহিংসতায় ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনে অন্তত ২৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শিশুও রয়েছে। আর ফিলিস্তিনিদের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে মারা গেছেন ১২ জন।