প্রায় ১০ দিন ধরে চলমান শ্রমিক বিক্ষোভের ফলে আশুলিয়ায় অনেক পোশাক কারখানায় ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার পর্যন্ত ৭৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। মালিকপক্ষ আশঙ্কা করছে, এই বিক্ষোভ শিল্পখাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
অন্যদিকে, শ্রমিক নেতারা দাবিগুলোর প্রতি সংবেদনশীলতা দেখিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পরিস্থিতির ঘোলাটে হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে।
রবিবার রাতে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালীন একটি র্যাব গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। শ্রমিকদের বিক্ষোভের শুরু প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন আগে, যখন একটি কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। সপ্তাহখানেক আগে এই আন্দোলন আরও বড় আকার ধারণ করে।
শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষের ‘আন্তরিকতার অভাব’ই এই পরিস্থিতির কারণ। বাংলাদেশ গামের্ন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও শ্রমিকদের বৈষম্য দূর হয়নি। শ্রমিকদের দাবিগুলো যদি আন্তরিকভাবে বিবেচনা করা হতো, তাহলে এ সমস্যা তৈরি হতো না।
শ্রমিকদের মূল দাবি বিভিন্ন ধরনের এবং মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা বলছেন, আগে শ্রমিক বিক্ষোভের দাবিগুলো নির্দিষ্ট থাকলেও এবার তা অযৌক্তিক হয়ে উঠেছে। বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, শ্রমিকদের দাবি বিভিন্ন কারখানায় ভিন্ন ভিন্ন, যেমন টিফিনের টাকা বাড়ানো, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবি। কিছু শ্রমিক পুরুষ শ্রমিকদের বেশি সুযোগ দিতে বলছেন।
মিন্টু বলেন, শ্রমিকরা যে দাবিগুলো তুলেছেন, তার বেশিরভাগই শ্রম আইনে রয়েছে। টিফিন বিল ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব।
এদিকে, বিক্ষোভের কারণে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকরা কারখানায় কাজ না করে বসে থাকছে, যার কারণে মালিকরা দুপুরের পর তাদের ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন। অনেক কারখানা নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন।
শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনের অভিযোগও উঠেছে। মিন্টু বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং জুট ব্যবসার মালিকানা নিয়ে ঝামেলা এর পেছনে অন্যতম কারণ হতে পারে।
সমাধানের জন্য, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার সব কারখানা খোলা থাকবে। বৈঠকে নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের নিয়োগের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং হাজিরা বোনাস বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।