নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আজারবাইজানের হলেও সেটি জাতিগত আর্মেনিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে। বিতর্কিত এই অঞ্চলটি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে গত বিশ বছরে এটি সবচেয়ে গুরুতর সংঘাত।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গানজায় আর্মেনিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলার পর নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের লড়াই এবং উত্তেজনা আর তীব্র হয়েছে।
এর আগে আজারবাইজানের বাহিনী নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলের রাজধানী স্টেপানাকার্টে একটানা গোলাবর্ষণ করে। খবর বিবিসি বাংলার
স্বঘোষিত এই কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, তাদের আঞ্চলিক রাজধানী স্টেপানাকার্টে আজারবাইজানের সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণ করার পরে তারা আজারবাইজানের গানজার সামরিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।
তবে সেখানে কোন সেনা সদস্য হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছে আজারবাইজান।গানজা হচ্ছে আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার মানুষ থাকে এই শহরে।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় এই শহরটি লক্ষ্য করে আর্মেনিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। নাগার্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী দাবি করছে, তারাও গানজা শহরে হামলা চালিয়ে সেখানকার বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ গুরুত্বপূর্ণ শহর পুনরুদ্ধার করেছে আজারবাইজান
এদিকে আজারবাইজানের বাহিনীওনাগার্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শহরে কেবল সাইরেন আর গোলা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে থেমে থেমে। স্টেপানাকার্ট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ বাসে করে শহর ছেড়ে যাচ্ছেন। দুই দেশেই পরস্পরের বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলার অভিযোগ তুলছে।
এ পর্যন্ত উভয়পক্ষে প্রায় ২৪০ জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন বেসামরিক মানুষ। মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই লড়াই শুরু হওয়ার পর এখন তা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই সংঘাতে উভয় পক্ষেরই সামরিক এবং বেসামরিক অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। যদিও হতাহতের এসব তথ্যের ব্যাপারে নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে, তাদের সেনাবাহিনী রবিবার ওই অঞ্চলের সাতটি গ্রাম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অন্যদিকে নাগার্নো-কারাবাখের দাবি, তাদের সৈন্য তাদের অবস্থানের দিক থেকে বেশ ভালোরকম অগ্রগতি করেছে।
সেখানে যুদ্ধ বিরতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে আহ্বান জানাচ্ছে, কোন দেশই এখনো তাতে সাড়া দেয়নি। একইসাথে এই সংঘাতে উভয় পক্ষেরই সামরিক এবং বেসামরিক অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। যদিও হতাহতের এসব তথ্যের ব্যাপারে নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে আর্মেনিয়া ঘোষণা দিয়েছিল যে, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আলোচনা করতে রাজি আছে। তবে আর্মেনিয়া বলেছেন, নাগার্নো-কারাবাখ আর্মেনিয়ার সেনা প্রত্যাহারের আগে কোন আলোচনা তারা করবে না।
এই সংঘাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স। আর্মেনিয়া বলছে, তারা আপোষ আলোচনায় রাজী। কিন্তু আজারবাইজান বলেছে, যে কোন আলোচনায় বসার আগে আর্মেনিয়ার বাহিনীকে অবশ্যই নাগার্নো-কারাবাখ থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার সময় নাগার্নো-কারাবাখ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়, যাতে মারা যায় প্রায় ৩০,০০০ মানুষ। নাগার্নো-কারাবাখের স্বাধীনতাকে বিশ্বের কোন দেশই স্বীকৃতি দেয়নি।