ইউপি চেয়ারম্যানের হামলায় জবি শিক্ষক আহত
তানভীর আহমেদ/জবি প্রতিনিধিঃ
খুলনার কয়রায় উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদের বিরুদ্ধে। হামলার শিকার অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
গতকাল শুক্রবার (৫ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের মহারাজপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বাড়িসংলগ্ন রাস্তার ওপরে এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে প্রথমে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় রওনা দিয়েছেন।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার কয়রা উত্তরচক কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। তিনি সেখানে নিয়োগবিধি অনুযায়ী ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ পদে লিখিত পরীক্ষায় কেউ পাস করেনি। তার পরও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ তার পছন্দের প্রার্থী মাদ্রাসাটির উপাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানকে নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করেন।
এ সময় অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিধি মোতাবেক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চান। এরপর তিনি ও নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধির গাড়িতে করে ফেরার পথে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে তাদের গাড়ি থামিয়ে প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ ওই শিক্ষককে চড় মারেন এবং তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। এ সময় ওই অধ্যাপককে ফেলে রেখে ডিজির প্রতিনিধি চেয়ারম্যানের কথামতো নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করে চলে যায়।
কিন্তু জবির এই অধ্যাপক রাজি না হওয়ায় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা ২০-২৫ জন লোক তাকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে টেনে হিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামায়। এরপর চেয়ারম্যানের বাড়ির একটি কক্ষে আটকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে। জোরপূর্বক নিয়োগের কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়।
এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এর পূর্বে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। নিয়োগ পরীক্ষা শেষে তিনি আমার বাড়িতে নাশতা করতে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এখন রাস্তায়। ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি৷ তাই কথা বলতে পারবোনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, অধ্যাপক নজরুল এখন ঢাকায় ফেরার পথে। তার উপর হামলার বিষয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম এস দোহা বলেন, হামলার শিকার ওই শিক্ষক দ্রুতই অভিযোগ দায়ের করবেন। এরপরই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।