প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস করা হয়েছে অপরাজনীতির মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট করা, ইতিহাস বিকৃত করা, সন্ত্রাস আর লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার রাজনীতি করেছিল জিয়াউর রহমানসহ খুনিদের দোসররা। দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী সেই চক্রান্ত এখনও চলমান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এক স্মরণ সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
জাতীয় চার নেতা হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা ৩ নভেম্বরের জেল হত্যার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময়, ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেও, তা বন্ধ করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে, পুরস্কৃত করেছিলো খুনিচক্র। সে সময় যারা সত্যিকারের রাজনৈতিক নেতা ছিল, তাদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে জিয়াউর রহমান খুনিদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মূলত একটা দেশকে সম্পূর্ণ আদর্শ থেকে বিচ্যুত করার সব চেষ্টাই করেছিল জিয়াউর রহমান।’
জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল তাতে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় অনেকেই জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে বলে, তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে তার সাথে দলে ভিড়েছিল। কিন্তু তারা কী একবারও ভেবে দেখেছিলেন যে, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় বসে, তারা কিন্তু গণতন্ত্র দিতে পারে নি। কিছু দলকে রাজনীতি করতে দিলেই সেটা গণতন্ত্র হয়ে যায় না। তাই যদি হতো, তাহলে দেশ তো অনেক এগিয়ে যেতো!’
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া তারা একের পর এক ক্ষমতায় এসে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, হত্যা, কর্ম এসব করে সারা দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে, সংঘাত সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকা।
আজকে যারা ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জিয়া অথবা এরশাদের ভোট আপনারা দেখুন। আওয়ামী লীগ সবসময়ই নির্বাচনমুখী দল ছিল। সেখানে আমরা কী চেহারা দেখেছি। সেখানে তো আমরা জনগণ দেখিনি। তখন তো কথাই ছিল, দশটা গুন্ডা, বিশটা হোন্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা। এটাই তো ছিল তখনকার বাস্তবতা। ভোটার লিস্টের তো কোনো বালাই ছিল না তখন। এভাবেই তারা তখন নির্বাচনগুলো করেছে।’
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন ‘আমরা তো ভোটে হারিনি। সেখানেও একটা চক্রান্ত হল! ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা করেছিল বিএনপি।’
তিনি জানান, ‘২০০১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় এলো, তখন বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হলো। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভুয়া ভোটার দিয়ে জিততে চেয়েছিলো। এর প্রতিবাদে তখন আমরা আন্দোলন করেছিলাম। জনগণের প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখে মাত্র দেড় মাসের মাথায় ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল।’ বিএনপি নেতারা কী সেসব কথা ভুলে গেছেন? প্রশ্ন শেখ হাসিনার।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘একটা দল যে জনগণের জন্য কাজ করে। সেটা দেশে আওয়ামী লীগই প্রথম বারের মতো প্রমাণ করেছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পুরো রাজনীতিকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবার অপচেষ্টা করেছিল বিএনপি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করি বলেই, বার বার জনগণ আমাদের নির্বাচিত করেছে। যারা ভোটের জন্য জনগণের কাছে যেতেই পারে না। যাদের সংগঠনই তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠেনি। তারা মানুষকে কী দেবে! মানুষ তাদের পাশে দাঁড়াবে কেনো?’
বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতি ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠা করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টেলিভিশন-ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেকেই নানা কথা নানাভাবে বলার চেষ্টা করছেন এখন। অনেকে বলতে চাইছেন, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, প্রকৃতপক্ষে তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা দল হলো আওয়ামী লীগ। যে দল মানুষের অধিকার এমনকি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। যে দলের নেতাকর্মীদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ওপর তো বার বার হামলা হয়েছে। এত হত্যাকাণ্ডের পরও যে সংগঠনটা তৃণমূল থেকে এতো শক্তিশালী, সেই দলের তারা কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। তৃণমূলের মানুষের ভালোবাসা আর সমর্থনেই এই দল টিকে আছে। আর এই শক্তি যদি কারো চক্ষুশূল হয়, তাহলে আর কিছু বলার নেই। একটা কথা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কারো দয়া কিংবা করুণা ভিক্ষা করে ক্ষমতায় টিকে নেই।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে মানুষের কল্যাণে কাজ করা হয় বলেই, আওয়ামী লীগকে মানুষ সমর্থন দিয়ে যায় বার বার জয়ী করেছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে একটা গ্রুপই বা এলিট শ্রেণি সুবিধা পায় না। বরং সুবিধাটা গ্রাম পর্যায়ে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এত অপপ্রচার, এত মিথ্যাচার, এত হত্যাকাণ্ড, এত ষড়যন্ত্রের পরও আওয়ামী লীগ টিকে আছে, কারণ মানুষের সমর্থন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল আছে যাদের এত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে!’
সমালোচনাকারীদের শেখ হাসিনা ৩ নভেম্বরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র করে খুন করে ফেলা যায়। কিন্তু জনসমর্থন না থাকলে, কেউ ক্ষমতায় যেয়ে টিকে থাকতেও পারে না, মানুষের কল্যাণও করতে পারে না। জেলখানার মতো সুরক্ষিত জায়গায় খুনিদের কে অনুমতি দিয়েছিল হত্যার, কে হুকুম দিয়েছিল হত্যার। সেটি কী একবারও ভেবে দেখেছেন, অপপ্রচারকারীরা!’
আওয়ামী লীগ তৃণমূলের শক্তিতেই বেঁচে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য যতবেশি নাড়াচাড়া করা হবে, ততবেশি আওয়ামী লীগের শিকড় মাটিতে আরো বেশি শক্ত হবে, পোক্ত হবে। এটাই বাস্তবতা।’