সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় আর মিথ্যা ধ্বংস করে। ইসলামে মিথ্যা, অযথা কথাবার্তা কিংবা গোড়ামি তথা তর্কাতর্কির সুযোগ নেই। এসব কাজ মানুষের জন্য দুনিয়ায় যেমন সম্মানহানী ও ক্ষতির কারণ তেমনি পরকালেও তা চূড়ান্ত ধ্বংসের কারণ। যা থেকে বিরত থাকা মানুষের জন্য খুবই জরুরি।কোনো ঈমানদার ব্যক্তিই মিথ্যা কিংবা গোড়ামি করতে পারে না। ইসলাম মিথ্যা এবং গোড়ামি তথা বেহুদা তর্কাতর্কিকে সমর্থন করে না। ইসলামের জন্য কোনো বিষয়েই মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই।
তবে ইসলাম মানুষকে সত্যের ব্যাপারে উত্তম ও যুক্তিসঙ্গতভাবে তর্ক করর অনুমোদন দেয়। তারপরও যারা এ উত্তম তর্ক থেকে বিরত থাকে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কারের ঘোষণা। উত্তমভাবে তর্ক করা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন-
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
‘(হে রাসুল!) আপনি আপনার পালনকর্তার পথের দিকে আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১২৫)
এ আয়াতে ইসলামের জন্য তর্ক করার বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে তা করতে হবে যুক্তির সঙ্গে ন্যয় সঙ্গতভাবে। অন্যায়-অশ্লীল যুক্তি, কথাবার্তার মাধ্যমে কিংবা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ইসলামের দাওয়াত তথা ধর্মের কথা বলা যাবে না।
যে ব্যক্তি অসত্য পথ ত্যাগ করে, অন্যায়ের পক্ষে তর্ক করা থেকে বিরত থাকে এমনকি ন্যয়ের পক্ষে থেকেও তর্ক করে না এবং ইসলামসহ জীবনের কোনো পর্যায়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয় না; ওই ব্যক্তির দুনিয়া ও পরকালের নাজাত সহজ এবং উত্তম। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ের পক্ষে তর্ক করে না, তার জন্য জান্নাতের এক পার্শ্বে একটি ঘর তৈরি করা হয়। আর যে ব্যক্তি ন্যয়ের পক্ষে থেকেও তর্ক পরিহার করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘর তৈরি করা হয়। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সুন্দর করে তার জন্য জান্নাতের উপরের অংশে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, বয়হাকি)
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, যদিও উত্তম ও যুক্তিসঙ্গতভাবে তর্ক-বিতর্ক করার অনুমোদন রয়েছে ইসলামে, তথাপিও যারা তর্ক পরিহার করে চলবে তাদের জন্য জান্নাত উত্তম বাসস্থান লাভের ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অন্য হাদিসে এসেছে-
হজরত মুআজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের পাশ্বদেশে একটি, জান্নাতের মধ্যভাগে একটি এবং জান্নাতের উপরিভাগে আরও একটি ঘরের জামিন হচ্ছি। যে ব্যক্তি সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্বেও তর্ক পরিহার করে, উপহাসের ছলে হলেও মিথ্যা কথা বর্জন করে, আর নিজের চরিত্রকে সুন্দর করে।’ (মুসনাদে বাযযার, তারগিব)
সুতরাং মুমন মুসলমানের উচিত, সব ধরনের তর্ক-বিতর্ক, মিথ্যা ও অমূলক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা। তর্ক করা ছাড়া ইসলামের সৌন্দর্য মানুষের কাছে তুলে ধরা। নিজেদের সত্যবাদী ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অযথা তর্ক-বিতর্ক থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। নৈতিক ও উন্নত চরিত্র গঠনের তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।