যুদ্ধবিরতি নাকি সরকার, কোনটা বেছে নেবেন– শিগগিরই যেকোনও একটি বেছে নিতে বাধ্য হতে পারেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যেসব শর্তে একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে, বাইডেনের প্রস্তাবের সঙ্গে এগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু এখনও তা প্রকাশ করা হয়নি। আর নেতানিয়াহুর জোট সরকারের মধ্যে দুটি উগ্র-ডানপন্থি দলের নেতা অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করার আগে সরকার যদি বাইডেনের প্রস্তাব মেনে নেয় তাহলে সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন। এমনকি নেতানিয়াহুর নিজ দল লিকুদ পার্টির কয়েকজন সদস্যও তাদের সঙ্গে শামিল হতে চান। ফলে পরিস্থিতি নেতানিয়াহুর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নেতানিয়াহুর সমালোচকরা তাকে অস্থিরচিত্তের বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলেছেন, নেতানিয়াহুর দুটি রূপ রয়েছে। একটি রূপে তিনি কিছু বিরোধী মধ্যপন্থিদের নিয়ে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা করে সর্বজনীন বৈধতা পেতে চাইছেন। আর অপরটি কার্যত জোটের উগ্র-ডানপন্থিদের হাতে জিম্মি। এই উগ্র-ডানপন্থিরা হামাসকে কোনও ছাড় দেওয়ার বিরোধী। এমনকি রাজনীতির মাঠে নেতানিয়াহুর টিকে থাকাও তাদের ওপরই নির্ভর করে।
শুক্রবার বাইডেন গাজা নিয়ে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘোষণার পর রবিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ‘চলমান এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কোনোভাবেই আমরা হামাসের শাসন মেনে নেবো না। ইসরায়েল গাজায় কিছু ‘বিচ্ছিন্ন এলাকা’ তৈরি করবে, হামাসকে নিমূর্ল করবে এবং ‘একটি বিকল্প সরকার গঠনে সক্ষম এমন একটি বাহিনী গড়ে তুলবে।’ তবে সেই বাহিনী কাদের নিয়ে গঠিত হবে তা সম্পর্কে বিশদ কিছু বলেননি তিনি।
বাইডেনের প্রস্তাবে গাজায় যুদ্ধের অবসান ও হামাসের হাতে আটক সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি তিন ধাপের প্রক্রিয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রথমত, ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের বিনিময়ে হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর, চলমান যুদ্ধের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি পরবর্তীতে একটি স্থায়ী বিরতিতে পরিণত করতে আলোচনার ধাপ থাকবে। শেষ ধাপে গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গত নভেম্বরে একটি সীমিত চুক্তির আওতায় সশস্ত্র যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি ১০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। আনুমানিক ১২৫ জন এখনও গাজায় হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে আটক রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কয়েক ডজন মারা গেছেন বলে মনে করা হয়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে নির্বাচন ঠেকাতে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার অভিযোগও এনেছেন তার বিরোধীরা। এমনকি ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও নীতিগত ব্যর্থতাকে ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য দায়ী করেছেন। এই হামলার কারণে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী পাল্টা হামলা শুর করে, যা ব্যাপক মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের সূত্রপাত করে।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিউভেন হাজান বলেছেন, নেতানিয়াহু তার জোটের উগ্র-ডানপন্থিদের ত্যাগ করতে ইচ্ছুক কি-না এ নিয়ে কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক সন্দিহান। এমনটি করার জন্য ‘একজন নতুন নেতানিয়াহু’র প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন তিনি।
অধ্যাপক হাজান বলেছিলেন, যখনই দেশের জন্য অথবা তার চরমপন্থিদের, এমনকি তার নিজের দলের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ এসেছে নেতানিয়াহু সবসময় চরমপন্থি ধর্মান্ধদেরই বেছে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলছিলেন, নেতানিয়াহু কি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দেশের জন্য যা ভালো তা করতে প্রস্তুত? সবাই এখন এটি নিয়েই উদ্বিগ্ন। এমন না যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের একটি ভাষণেই নেতানিয়াহু পাল্টে যাবেন।