এএসপি আনিসকে হত্যা ‘পরিকল্পিত’, জড়িতদের দায় স্বীকার।রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মচারীদের পিটুনিতে বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার (এএসপি) আনিসুল করিমের মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার পর একে ‘হত্যাকাণ্ডই’ বলছে পুলিশ।এএসপি আনিসকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। এ ঘটনার সাথে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, ব্যবস্থাপনার জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মারধরে জড়িত আরিফ মাহমুদ জয় (৩৫) হাসপাতালে মার্কেটিং ম্যানেজার, রেদোয়ান সাব্বির (২৩) কো-অর্ডিনেটর, মো. মাসুদ (৩৭) কিচেন সেফ, জোবায়ের হোসেন (১৯) ওয়ার্ড বয়, তানভীর হাসান (১৮) ফার্মাসিস্ট, তানিফ মোল্লা (২০) ওয়ার্ড বয়, সজীব চৌধুরী (২০) ওয়ার্ড বয়, অসীম চন্দ্র পাল (২৪) ওয়ার্ড বয়, লিটন আহাম্মদ (১৮) ওয়ার্ড বয়, সাইফুল ইসলাম পলাশ (৩৫) ওয়ার্ড বয়।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
তিনি জানান, গতকাল সোমবার (৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৩১তম বিসিএস পলিশ ক্যাডারের সদস্য মো.আনিসুল করিমকে (৩৫) চিকিৎসা করানোর জন্য তার পরিবারের সদস্যরা আদাবর থানাধীন বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ২নং সড়কের ২৮১ নং বাড়িতে অবস্থিত মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এএসপিকে হাসপাতালে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে যাওয়ার পর আনিসুল করিম হাসপাতালের একটি রুমে নাস্তা গ্রহণ করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ওয়াশরুমে যেতে চাইলে ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় আনিসুল করিমকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যায়।
তখন তার বোন উম্মে সালমা তার সাথে যেতে চাইলে আরিফ মাহমুদ জয় ও রেদোয়ান সাব্বির তাকে বাধা দেয় এবং কলাপসিবল গেট আটকে দেয়।
আনুমানিক ১২টার দিকে আসামি আরিফ মাহমুদ জয় নিচে এসে তার বোনকে উপরে যাওয়ার জন্য ডাক দেয়। তার বোনসহ পরিবারের লোকজন উপরে গিয়ে আনিসুল করিমকে একটি রুমের ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্থায় শুয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পায়। তার পরিবারের সদস্যরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে আনিসুল করিমকে দ্রুত জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে যায়।
সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা করে আনিসুল করিমকে দুপুর ১২টা ৫৮ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আনিসুল করিমের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৯।
ডিসি হারুন আরও বলেন, ‘হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেলা অনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিটে আসামিরা আনিসুল করিমকে হাসপাতালের দোতলার একটি রুমে মারতে মারতে ঢুকায়। তাকে রুমের ফ্লোরে জোরপূর্বক উপুর করে ৩/৪ জন হাঁটু দিয়ে পিঠের উপর চেপে বসে, কয়েকজন পিঠমোড়া করে ওড়না দিয়ে তার দুই হাত বাঁধে। কয়েক জন আসামি কনুই দিয়ে ঘাড়ের পেছনে ও মাথায় আঘাত করে। একজন মাথার উপরে চেপে বসে এবং আসামিরা সকলে মিলে পিঠ, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরিকল্পিতভাবে মারপিট করে আনিসুল করিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তেজগাঁও বিভাগের এই ডিসি বলেন, ‘ঘটনা জানার পর থেকেই আদাবর থানা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় মারধরে জড়িত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতরা পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা হত্যায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
মারধরের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা তথ্য তুলে ধরে ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চিকিৎসার নামে ওই মানসিক হাসপাতালে এএসপি আনিসকে মারধর করা হয় এবং মারধরের সময় জড়িতরা কেউই ওই হাসপাতালের চিকিৎসক নন।’
ডিসি হারুন আরও দাবি করেন, ‘হাসপাতালটির কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। অবৈধভাবে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক রোগীর চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করে আসছে। স্থানীয় কিছু ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান, অ্যাম্বুলেন্স মালিক এবং দালালদের যোগসাজশে হাসপাতালটি প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য সেখানে কোনও ডাক্তার নেই। এখানকার চিকিৎসাধীন রোগীরা চলে গেলে হাসপাতালটি আমরা বন্ধ করে দেবো।’
উল্লেখ্য যে, ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার সদস্য আনিসুল করিম ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অত্যন্ত মেধাবী এই কর্মকর্তা কর্মজীবনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও সবশেষ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন।