ঢাকা ০৮:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি! Logo খাগড়াছড়িতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে ইউপিডিএফ Logo সামনে ঘোর অন্ধকার-আমরা ঘুমাচ্ছি Logo খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যুবদলের প্রতিষ্ঠা বাষিকী পালিত Logo কিশোরগঞ্জে ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল Logo হোসেনপুরে পুলিশের হাত থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নিল বিএনপি নেতারা Logo কিশোরগঞ্জ শহরে অটোরিকশার যানজট ও ফুটপাত দখল ভাঙতে মাঠে নামলেন ডিসি ফৌজিয়া খান Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক Logo রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনের মৃত্যুতে প্রবাস থেকে শোক প্রকাশ করলেন সেলিম রেজা Logo নলছিটিতে বিএনপির পক্ষে জনসংযোগ ও পথসভা করলেন এ্যাড. শাহাদাৎ হোসেন

একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি!

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০৫:৪২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০১০ বার পড়া হয়েছে

একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি অধিকার আন্দোলনের প্রবীণ মুখপাত্র বান্দরবানের অধিবাসী কাজী মুজিবর রহমানকে উদ্দেশ্য করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ‘কেএনএফ’ (Kuki-Chin National Front – KNF) নামক সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হুমকিভরা পোস্টে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) কেএনএফ -এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বার্তায় কাজী মুজিবরকে দৃঢ়ভাবে লক্ষ করা হবে এবং এক মার্কা হুমকি দিয়েছে – “একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট” – সংবলিত শব্দবন্ধটি স্থানীয় বাঙালি সম্প্রদায় ও সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, গত সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে বান্দরবানের একটি হোটেলে Life World Mission নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর ১ জন আমেরিকান ও ১১ জন দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক স্থানীয় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় নব্বই জন উপজাতিকে নিয়ে গোপন ধর্মীয় সভা আয়োজন করে। সভায় বাইবেল পাঠ, খ্রিস্টীয় প্রার্থনা, গান এবং আর্থিক ও শিক্ষাগত সহায়তার প্রলোভন দেখিয়ে অংশগ্রহণকারীদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ২১ অক্টোবর কাজী মজিবর রহমান নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণ হোটেল ডিমোর ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই বিদেশিদের পুলিশ প্রটেকশনে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পাঠানো হয়।

কাজী মুজিবর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি জনগোষ্ঠীর কল্যাণে দীর্ঘ দিন যাবৎ পাহাড়ের বাঙালিদের নিরাপত্তা, ভূমির অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে কাজ করে আসছেন। পাহাড়ে বাঙালির অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষার প্রশ্নে তিনি দৃঢ়, অবিচল ও নির্ভীক কণ্ঠস্বর। তাঁর এই অবিচল অবস্থানই তাঁকে রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতায় ঠেলে দেয়।

স্থানীয়রা বলেন, তিনি ছিলেন পাহাড়ের বাঙালিদের একমাত্র নির্ভরতার প্রতীক, যিনি নিঃস্বার্থভাবে লড়েছেন জাতির অস্তিত্ব ও রাষ্ট্রের সার্বভৌম মর্যাদা রক্ষার জন্য। দুঃখজনক যে তাকে এখনো রাজনৈতিক ট্যাগ হচ্ছে। অথচ পার্বত্য বাঙালিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বড়ো হওয়ার কথা না।

জাতিগত অস্তিত্বের প্রশ্নে জাতীয় রাজনীতি নয়, বাঙালি পরিচয়ই হওয়া উচিত একমাত্র অগ্রাধিকার-কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পাহাড়ে বাঙালির আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে জাতীয় রাজনীতির খেলা ব্যবহার করা হয়! যারা কখনো বাঙালির অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন না, তারাই আজ কাজী মুজিবর রহমানকে রাজনৈতিক পরিচয়ের মোড়কে দমন করার চেষ্টায় ব্যস্ত। অর্থাৎ, যে মানুষটি পাহাড়ে বাঙালির অস্তিত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার পক্ষে লড়ছেন, তাকেই “রাজনৈতিক” তকমা দিয়ে দুর্বল করার অপপ্রয়াস চলছে- এ এক পরিহাস, এক ভয়ংকর প্রহসন।

সচেতন মহলের দাবী, কেএনএফ পোস্টে শুধু ব্যক্তিসূচক হুমকি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্যও হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে—যা স্থানীয় সমাজ এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই গোষ্ঠী, যা গত কয়েক বছরে পার্বত্য অঞ্চলে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে এবং অস্ত্র সংগ্রহ, অপহরণ ও সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের ২ ও ৪ তারিখ রুমা-থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি, ম্যানেজার অপহরণ ও পুলিশ আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুটের অভিযোগ ছিল মারাত্মক।

কেএনএফ-কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বান্দরবান জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কৈ হ্লা মারমা ‘শান্তি কমিটি’ গঠন করেন এবং ভার্চুয়াল ও সরাসরি একাধিক বৈঠক আয়োজন করেন। সরকারের পক্ষ থেকে কেএনএফ-এর অনেকগুলো দাবির মধ্য থেকে ১১টি দাবি পূরণ করার আশ্বাস নিশ্চিত করার পর, অবশিষ্ট দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা চলমান ছিল। তবে পরবর্তীতে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা বিচ্ছিন্ন করে তথাকথিত ‘কুকিল্যান্ড’ গঠনের লক্ষ্যে পুনরায় সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের পথ বেছে নেয়।

স্থানীয় সূত্র দাবী করে যে, কেএনএফ-এর এই পোস্ট একদিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সরাসরি হুমকি, অন্যদিকে সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার শামিল বর্বর বার্তা বহন করে। কেএনএফ-এর সামাজিক উপস্থিতি ও পেজের ব্যবহার ইতোমধ্যেই নজরে এসেছে-তাই তাদের অনলাইন পোস্টকে কেবল ব্যক্তিগত অপব্যবহার হিসেবে নয়, সম্ভাব্য পরিকল্পিত সন্ত্রাসী প্ররোচনার অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায় কাজী মুজিবরের বিরুদ্ধে প্রদত্ত এই হুমকির তীব্র নিন্দা করেছেন এবং প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে প্রত্যেক মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অভিব্যক্তি রক্ষার অধিকার রয়েছে; কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এই অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা চলবে না। প্রতিক্রিয়াকারীদের ভাষ্য, হুমকির উৎস ও দায়ীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জাতীয় ঐক্য বিপন্ন হবে।

স্থানীয় নেতারা নিরাপত্তা জোরদার, কেএনএফ-এর অনলাইন পৃষ্ঠাসমূহের মনিটরিং ও সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের মৌলিক অধিকার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা হোক এবং যে কোনো ধরনের সশস্ত্র ভাঙচুরের প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন হোক।

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও তার সশস্ত্র শাখা, তাদের ইতিহাস এবং পার্বত্য অঞ্চলে সংঘটিত সহিংস কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত বিস্তৃত তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রকাশনায় পাওয়া যায়। যা প্রমাণ করে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

উল্লেখ্য যে, খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের বিরোধিতা করায় স্থানীয়ভাবে বম পার্টি নামে পরিচিত কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) হুমকি প্রদান করে। প্রায় তের হাজার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বম জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে গঠিত এই সংগঠনটি ২০২২ সালের পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও প্রকাশ করে এবং তথাকথিত ‘কুকিল্যান্ড’ গঠনের দাবি তোলে। পরবর্তীতে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়।

ট্যাগস :

একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি!

আপডেট সময় : ০৫:৪২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট: বাঙালি নেতাকে কেএনএফ-এর হুমকি!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি অধিকার আন্দোলনের প্রবীণ মুখপাত্র বান্দরবানের অধিবাসী কাজী মুজিবর রহমানকে উদ্দেশ্য করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, ‘কেএনএফ’ (Kuki-Chin National Front – KNF) নামক সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হুমকিভরা পোস্টে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) কেএনএফ -এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বার্তায় কাজী মুজিবরকে দৃঢ়ভাবে লক্ষ করা হবে এবং এক মার্কা হুমকি দিয়েছে – “একটি স্নাইপার বুলেটই যথেষ্ট” – সংবলিত শব্দবন্ধটি স্থানীয় বাঙালি সম্প্রদায় ও সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, গত সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে বান্দরবানের একটি হোটেলে Life World Mission নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর ১ জন আমেরিকান ও ১১ জন দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক স্থানীয় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় নব্বই জন উপজাতিকে নিয়ে গোপন ধর্মীয় সভা আয়োজন করে। সভায় বাইবেল পাঠ, খ্রিস্টীয় প্রার্থনা, গান এবং আর্থিক ও শিক্ষাগত সহায়তার প্রলোভন দেখিয়ে অংশগ্রহণকারীদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ২১ অক্টোবর কাজী মজিবর রহমান নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণ হোটেল ডিমোর ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। পরে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই বিদেশিদের পুলিশ প্রটেকশনে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পাঠানো হয়।

কাজী মুজিবর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি জনগোষ্ঠীর কল্যাণে দীর্ঘ দিন যাবৎ পাহাড়ের বাঙালিদের নিরাপত্তা, ভূমির অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে কাজ করে আসছেন। পাহাড়ে বাঙালির অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষার প্রশ্নে তিনি দৃঢ়, অবিচল ও নির্ভীক কণ্ঠস্বর। তাঁর এই অবিচল অবস্থানই তাঁকে রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতায় ঠেলে দেয়।

স্থানীয়রা বলেন, তিনি ছিলেন পাহাড়ের বাঙালিদের একমাত্র নির্ভরতার প্রতীক, যিনি নিঃস্বার্থভাবে লড়েছেন জাতির অস্তিত্ব ও রাষ্ট্রের সার্বভৌম মর্যাদা রক্ষার জন্য। দুঃখজনক যে তাকে এখনো রাজনৈতিক ট্যাগ হচ্ছে। অথচ পার্বত্য বাঙালিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বড়ো হওয়ার কথা না।

জাতিগত অস্তিত্বের প্রশ্নে জাতীয় রাজনীতি নয়, বাঙালি পরিচয়ই হওয়া উচিত একমাত্র অগ্রাধিকার-কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পাহাড়ে বাঙালির আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে জাতীয় রাজনীতির খেলা ব্যবহার করা হয়! যারা কখনো বাঙালির অধিকার রক্ষায় সোচ্চার ছিলেন না, তারাই আজ কাজী মুজিবর রহমানকে রাজনৈতিক পরিচয়ের মোড়কে দমন করার চেষ্টায় ব্যস্ত। অর্থাৎ, যে মানুষটি পাহাড়ে বাঙালির অস্তিত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার পক্ষে লড়ছেন, তাকেই “রাজনৈতিক” তকমা দিয়ে দুর্বল করার অপপ্রয়াস চলছে- এ এক পরিহাস, এক ভয়ংকর প্রহসন।

সচেতন মহলের দাবী, কেএনএফ পোস্টে শুধু ব্যক্তিসূচক হুমকি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্যও হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে—যা স্থানীয় সমাজ এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই গোষ্ঠী, যা গত কয়েক বছরে পার্বত্য অঞ্চলে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে এবং অস্ত্র সংগ্রহ, অপহরণ ও সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের ২ ও ৪ তারিখ রুমা-থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি, ম্যানেজার অপহরণ ও পুলিশ আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুটের অভিযোগ ছিল মারাত্মক।

কেএনএফ-কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বান্দরবান জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কৈ হ্লা মারমা ‘শান্তি কমিটি’ গঠন করেন এবং ভার্চুয়াল ও সরাসরি একাধিক বৈঠক আয়োজন করেন। সরকারের পক্ষ থেকে কেএনএফ-এর অনেকগুলো দাবির মধ্য থেকে ১১টি দাবি পূরণ করার আশ্বাস নিশ্চিত করার পর, অবশিষ্ট দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা চলমান ছিল। তবে পরবর্তীতে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা বিচ্ছিন্ন করে তথাকথিত ‘কুকিল্যান্ড’ গঠনের লক্ষ্যে পুনরায় সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের পথ বেছে নেয়।

স্থানীয় সূত্র দাবী করে যে, কেএনএফ-এর এই পোস্ট একদিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সরাসরি হুমকি, অন্যদিকে সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার শামিল বর্বর বার্তা বহন করে। কেএনএফ-এর সামাজিক উপস্থিতি ও পেজের ব্যবহার ইতোমধ্যেই নজরে এসেছে-তাই তাদের অনলাইন পোস্টকে কেবল ব্যক্তিগত অপব্যবহার হিসেবে নয়, সম্ভাব্য পরিকল্পিত সন্ত্রাসী প্ররোচনার অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

পার্বত্য বাঙালি সম্প্রদায় কাজী মুজিবরের বিরুদ্ধে প্রদত্ত এই হুমকির তীব্র নিন্দা করেছেন এবং প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে প্রত্যেক মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অভিব্যক্তি রক্ষার অধিকার রয়েছে; কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এই অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা চলবে না। প্রতিক্রিয়াকারীদের ভাষ্য, হুমকির উৎস ও দায়ীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জাতীয় ঐক্য বিপন্ন হবে।

স্থানীয় নেতারা নিরাপত্তা জোরদার, কেএনএফ-এর অনলাইন পৃষ্ঠাসমূহের মনিটরিং ও সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের মৌলিক অধিকার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা হোক এবং যে কোনো ধরনের সশস্ত্র ভাঙচুরের প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন হোক।

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও তার সশস্ত্র শাখা, তাদের ইতিহাস এবং পার্বত্য অঞ্চলে সংঘটিত সহিংস কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত বিস্তৃত তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রকাশনায় পাওয়া যায়। যা প্রমাণ করে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

উল্লেখ্য যে, খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের বিরোধিতা করায় স্থানীয়ভাবে বম পার্টি নামে পরিচিত কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) হুমকি প্রদান করে। প্রায় তের হাজার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বম জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে গঠিত এই সংগঠনটি ২০২২ সালের পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও প্রকাশ করে এবং তথাকথিত ‘কুকিল্যান্ড’ গঠনের দাবি তোলে। পরবর্তীতে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে কেএনএফ-এর বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়।