গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হলে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণফোরামের একাংশ। ২৬ ডিসেম্বরের কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে প্রয়োজনে তাকে শোকজ করা হবে এবং পরবর্তিতে তিনি বহিষ্কারও হতে পারেন বলে দলটির বিদ্রোহী অংশের নেতারা জানান।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণফোরামের রক্ষার প্রত্যয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দলটির বিদ্রোহী নেতারা এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গণফোরামের একাংশের নেতা সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দলের মধ্যে সব গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। তার সম্মতিক্রমেই হচ্ছে এসব। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত সাক্ষাৎকার ও উদ্দেশ্যমূলক বিবৃতির মাধ্যমে চরিত্রহনন এবং দুষ্টচক্রের পৃষ্ঠপোষকতা, রাজনৈতিক ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কারণে ড. কামাল হোসনের বিষয়ে গঠনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হব।’
সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত কী হতে পারে প্রশ্ন করা হলে সাবেক নির্বাহী সভাপতি বলেন, ‘সভাপতি হোক বা সদস্যই হোক, কেউ যদি গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন তাহলে তাকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি থাকতে হয়। তার আগে শোকজ দিতে হয়। এটাই গঠনতন্ত্রের বিধান।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর আগে বলা হয়েছিল, ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে ২৬ ডিসেম্বর দলের কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু ড. কামাল হোসেন এখনও ড. রেজা কিবরিয়ার যোগসাজশে গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। সেজন্য এই প্রক্রিয়া আগেও হতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে ড. কামাল হোসেন কী ভূমিকা রাখেন তার ওপর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে মোস্তফা মহসীন মন্টু, আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী ও জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ ৮ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের মূল এই অংশটি ১২ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা করে। এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরামের বিদ্রোহী অংশ জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্ধিত সভা করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মহসিন রশিদ, আ ও ম শফিকউল্লাহ ও মোশতাক হোসেনকে বহিষ্কার করে। তারা ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘ড. রেজা কিবরিয়া ও মুকাব্বির খান- এই দুইজনই বিদেশভিত্তিক রাজনীতি করেন। রেজা কিবরিয়ার মাটি ও মানুষের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। মুকাব্বির বিদেশে থাকেন, মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন, একটা সংগঠনও নাই তার নির্বাচনী এলাকায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের ৬ দিন আগে দেশে এসে নির্বাচনটা করে একটা অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন। সুলতান মো. মনসুরও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গত ২৭ বছর দলের ভেতরে আভ্যন্তরীন গণতন্ত্র নেই। ড. কামাল হোসেন ২৭ বছর ধরে সভাপতি। এর মধ্যে সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সুব্রত চৌধুরী, প্রকৌশলী আবুল কাশেম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সবাই নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আর ড. কামাল হোসেন একটানা সভাপতি।’
দলের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনকে একটা বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে গেছে। তিনি সম্মানিত ব্যক্তি। জাতির এই সংকটে তিনি জাতির বিবেক ও অভিভাবক হিসেবে তাকে দেখতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, খান সিদ্দিকুর রহমান, আইয়ুব খান ফারুক, আতাউর রহমান, হাসিব চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।