ঢাকা ০৮:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo রংপুরে উপদেষ্টার সামনে প্রেজেনটেশনে মুজিব ও হাসিনার ছবি প্রদর্শন Logo পিআর, সংস্কার ও জুলাই সনদের দাবিতে রাঙামাটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গণমিছিল Logo আন্দোলনের ৭ দিনের মধ্যেই ক্লাসে ফিরছে নেপালের শিক্ষার্থীরা Logo কক্সবাজারে স্ত্রীকে ধর্ষণের পর স্বামীকে খুন, খুনি আটক Logo বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে জামায়াত Logo পিরোজপুরে পুলিশ লাইন্স ফোর্স ব্যারাক সংস্কার কাজের উদ্বোধন Logo মবসৃষ্টিকারী সম্মনয়ক ফারজানা চাঁদাবাজি মামলায় আটক Logo ঝালকাঠিতে বাসন্ডা নদী থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার Logo জাকসুর ভিপি হলেন ছাত্রলীগের সাবেক সক্রিয় কর্মী জিতু Logo রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া চষে বেড়াচ্ছে এমপি প্রার্থী ড. ফয়জুল হক

এমসি কলেজে গণধর্ষণ: গাড়িটি ধুয়ে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল তারা

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০
  • / ১০৩৮ বার পড়া হয়েছে

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে প্রাইভেটকারের ভেতরে গৃহবধূকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে সাইফুর ও অর্জুনসহ চারজন।

পরে গণধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে গাড়িটি আটকে রেখেছিল অভিযুক্তরা। তবে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল রানা এ সময় ছাত্রাবাসে ঢুকে পড়ায় তা করতে পারেননি অভিযুক্তরা।

ছাত্রাবাসের ফটকে দাঁড়িয়ে যখন ভেতরে প্রবেশ করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষা করছিল পুলিশের একটি দল তখন গাড়িটি ধুয়ে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।

ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে বের হয়েছে এমন তথ্য। শুক্রবার (০২ অক্টোবর) রাতে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় সাইফুর রহমান (২৮) ও অর্জুন লস্কর (২৫) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তারা দুজনসহ চারজন গৃহবধূকে ছাত্রাবাসে গাড়িতে চারবার ধর্ষণ করেছেন বলে জবানবন্দিতে বলেছেন। তাদের সঙ্গী রবিউল ইসলাম ধর্ষণে সহযোগিতা করেছেন। ধর্ষণকাণ্ড আড়াল করতে গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত মুছতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পুলিশ দেখে পালিয়ে যান বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন অভিযুক্তরা।

জবানবন্দিতে সাইফুর ও অর্জুন জানান, তারা দুজনসহ মোট চারজন গৃহবধূকে ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে প্রাইভেটকারের ভেতরে চারবার ধর্ষণ করেন। রবিউল ইসলাম ধর্ষণে সহযোগিতা করেছেন। মোটরসাইকেল দিয়ে দুজন তাদের ছাত্রাবাসে পৌঁছে দেন। তবে রবিউল ধর্ষণ করেননি। পরে গৃহবধূ ও তার স্বামীকে বিদায় করে ধর্ষণকাণ্ড আড়াল করতে গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত মুছতে চেয়েছিলেন তারা।

শনিবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে গণধর্ষণের মামলায় আরও তিন আসামিকে রিমান্ড শেষে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুল ইসলামের আদালতে নেয়া হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার তিন নম্বর আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনউদ্দিন।

শনিবার আরও দুই আসামির ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারেকুল ইসলাম তারেক ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ পাহারায় তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর তাদের সেখান থেকে আবার পুলিশ পাহারায় নিয়ে যাওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) ল্যাবে সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে শাহ রনি, মো. রাজন ও আইন উদ্দিনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, এর আগে গ্রেফতার ছয়জনের ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছে। শনিবার এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামির নমুনা নেয়া হয়েছে।

২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই গৃহবধূকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসের সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই পালাক্রমে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখেন দুইজন।

এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। গণধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী।

এ ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ সন্দেহভাজন আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত মোট আটজনের সবাইকে ধাপে ধাপে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন শুক্রবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এমসি কলেজে গণধর্ষণ: গাড়িটি ধুয়ে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল তারা

আপডেট সময় : ০৫:৩৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অক্টোবর ২০২০

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে প্রাইভেটকারের ভেতরে গৃহবধূকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে সাইফুর ও অর্জুনসহ চারজন।

পরে গণধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে গাড়িটি আটকে রেখেছিল অভিযুক্তরা। তবে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল রানা এ সময় ছাত্রাবাসে ঢুকে পড়ায় তা করতে পারেননি অভিযুক্তরা।

ছাত্রাবাসের ফটকে দাঁড়িয়ে যখন ভেতরে প্রবেশ করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষা করছিল পুলিশের একটি দল তখন গাড়িটি ধুয়ে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।

ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে বের হয়েছে এমন তথ্য। শুক্রবার (০২ অক্টোবর) রাতে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় সাইফুর রহমান (২৮) ও অর্জুন লস্কর (২৫) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তারা দুজনসহ চারজন গৃহবধূকে ছাত্রাবাসে গাড়িতে চারবার ধর্ষণ করেছেন বলে জবানবন্দিতে বলেছেন। তাদের সঙ্গী রবিউল ইসলাম ধর্ষণে সহযোগিতা করেছেন। ধর্ষণকাণ্ড আড়াল করতে গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত মুছতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু পুলিশ দেখে পালিয়ে যান বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন অভিযুক্তরা।

জবানবন্দিতে সাইফুর ও অর্জুন জানান, তারা দুজনসহ মোট চারজন গৃহবধূকে ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে প্রাইভেটকারের ভেতরে চারবার ধর্ষণ করেন। রবিউল ইসলাম ধর্ষণে সহযোগিতা করেছেন। মোটরসাইকেল দিয়ে দুজন তাদের ছাত্রাবাসে পৌঁছে দেন। তবে রবিউল ধর্ষণ করেননি। পরে গৃহবধূ ও তার স্বামীকে বিদায় করে ধর্ষণকাণ্ড আড়াল করতে গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত মুছতে চেয়েছিলেন তারা।

শনিবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে গণধর্ষণের মামলায় আরও তিন আসামিকে রিমান্ড শেষে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুল ইসলামের আদালতে নেয়া হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার তিন নম্বর আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনউদ্দিন।

শনিবার আরও দুই আসামির ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তারেকুল ইসলাম তারেক ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ পাহারায় তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর তাদের সেখান থেকে আবার পুলিশ পাহারায় নিয়ে যাওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) ল্যাবে সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে শাহ রনি, মো. রাজন ও আইন উদ্দিনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, এর আগে গ্রেফতার ছয়জনের ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছে। শনিবার এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামির নমুনা নেয়া হয়েছে।

২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই গৃহবধূকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসের সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই পালাক্রমে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখেন দুইজন।

এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। গণধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী।

এ ঘটনায় র্যাব ও পুলিশ এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ সন্দেহভাজন আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত মোট আটজনের সবাইকে ধাপে ধাপে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন শুক্রবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।