সিলেট মহানগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফাঁড়িটির ইনচার্জ এসআই আকবর ভারতে পালিয়ে গেছেন, এমন দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর পরদিন তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হন এসআই আকবর। তারপর থেকেই তিনি লাপাত্তা। পিবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়েছেন।
এসআই আকবরের সাথে ভারতে পালিয়েছে তার ‘আত্মীয়’ আবদুল্লাহ আল নোমান। সীমান্ত পাড়ি দিতে তাদেরকে সহযোগিতা করেছে হেলাল আহমদ নামে এক চোরাকারবারি। নোমানের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ, গোয়েন্দা তথ্য এবং চোরাকারবারি হেলালকে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ আরও নিশ্চিত হতে পেরেছে, ১৪ অক্টোবর ভোরে তারা সিলেট ত্যাগ করেছে।
পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি
রায়হানকে নির্যাতনের সময় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন দুই কনস্টেবল সাইদুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন। আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, রাতভর নির্যাতনের পর ফজরের আগে আগে যখন রায়হানের মৃত্যু নিশ্চিত হয় তখন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর বলেন, ‘সিনিয়র স্যাররা এলে বলবি, ফাঁড়িতে এনে কাউকে নির্যাতন করা হয়নি। রায়হান ছিনতাই করতে গিয়ে ধরার পড়ার পর মারাত্মক গণপিটুনির শিকার হয়।’
এসআই আকবর তাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ঘটনার কথা কেউ যদি জানতে পারে তাহলে বুকে গুলি করে তোদেরকেও মেরে ফেলবো। যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছি, সেভাবে বলবি।’
এদিকে রায়হানের মৃত্যুতে গত ২২ অক্টোবর যে চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়, ভোতা অস্ত্রের একের পর এক আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। প্লাস কিংবা অন্য কোনো যন্ত্র দিয়ে টেনে উপড়ে ফেলা হয় দুটি নখ। মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে এসব নির্যাতন চালানো হয়েছে। অতিরিক্ত আঘাতের কারণে শরীরের ভেতরের রগ ফেটে গিয়ে যে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়েছে, তার কারণেই রায়হানের মৃত্যু হয়।
গত ১১ অক্টোবর ঘটে এমন নৃশংস ঘটনা। রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, ডিউটি শেষে রাত ১০টায় রায়হানের ফেরার কথা থাকলেও মধ্যরাত পর্যন্ত ফেরেনি। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ভোর ৪টা ২৩ মিনিটে একটি নম্বর থেকে (০১৭৮ ৩৫৬১১১১) কল করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে যেতে বলা হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফাঁড়িতে যাওয়ার পর বলা হয়, রায়হান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই আমার ছেলে মৃত।