অদৃশ্য করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মানতে দেশের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস ছিল উল্লেখ করার মতো জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সারা দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে এবং করোনাকালে তিনি একমাত্র ট্রাস্টেড সিঙ্গেল ফেস (একমাত্র বিশ্বস্ত ব্যক্তি) হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানুষের কষ্ট লাঘবে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও করোনা মোকাবিলায় সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।
একটা গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী, দলের ঢাকা মহানগর শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জীবনের সঙ্গে জীবিকার চাকা সচল হয়েছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে সীমিত পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে-পরে ৩১টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। করোনা সংক্রমণের বাস্তব কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে অধিকাংশ পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়েছে।
দলীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই-কমিটি গঠনে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় নেত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, তা মেনেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে এলে তাকে প্রথমেই নেতা বানাতে হবে-এমন কোনো কথা নেই। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনো অবস্থাতেই অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে না। একটি নির্দেশে এ বিষয়টি আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আপনারা যারা কমিটি করেছেন বা করবেন, তাদের কমিটি গঠনে এ নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, আট বিভাগের জন্য আটটি টিম সাংগঠনিকভাবে আমরা প্রস্তুত করে নেত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। (তিনি) অনুমোদন দিলে এই টিমগুলো আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি সর্বদা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সম্মেলনের পরে আমাদের সামনে ছিল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের আমরা অনেকটা গৃহবন্দি ছিলাম। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের শতবার্ষিকীর কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে সারা দুনিয়ার সকল বাঙালিকে ধন্য করেন। গৌরবান্বিত করেন। করোনার সংকটের কারণে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে বাংলা ভাষণ দেয়ার দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে পারিনি।
দেশে-বিদেশে করোনা সংক্রমণের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, গতবছর ডিসেম্বর থেকে সারাবিশ্ব করোনা মহামারি মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ মানুষের জীবনের স্বাভাবিক গতিপথকে পাল্টে দিয়েছে। পৃথিবীর উন্নত অনুন্নত সব দেশেই এই ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী মহামারি আঘাত হেনেছে। ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাকে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ ব্যাহত করেছে। ব্যত্যয় ঘটেছে শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবাখাতের ব্যবস্থাপনা। মানুষের জীবন-জীবিকা উভয় সংকটের মুখে। তারপরও কোনো সঙ্কটই মানবসভ্যতাকে থামিয়ে রাখতে পারিনি। থেমে থাকে না। করোনা মহামারির মধ্যেও থেমে থাকেনি মানুষের জীবন।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণকালে তার সুনিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সুনিপুণ ব্যবস্থাপনায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে অন্যান্য দেশের চেয়ে আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক সক্ষম হয়েছি। তিনি দক্ষ নাবিকের মতো দিশেহারা জনগোষ্ঠীকে সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে পথ দেখিয়েছেন। দেশের মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা লাঘবে ৭৩ বছর পেরিয়েও তিনি অবিরাম ছুটে বেরিয়েছেন। এ বয়সেও তার গতি অ্যারাবিয়ান হর্সের মতো।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জন্মদিনে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বন্ধুকন্যার পছন্দনীয় নয়। জন্মদিবস পালনে নেত্রী তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এটা পালন করতেও চান না। তারপরও আমাদের এটা দায়িত্ব। শেখ হাসিনার জন্মদিন বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার রোল মডেল। হাসিনা আমাদের উন্নয়ন এবং অর্জনের রোল মডেল। নিজে যা অর্জন করেছেন তা নজিরবিহীন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তার জন্মদিন পালন না করলে আমরা জাতির কাছে অকৃতজ্ঞ থেকে যাব।