বাংলাদেশে দ্রুত করোনার টিকা প্রাপ্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তা শিগগিরই কেটে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।ভারতের টিকার চাহিদা মেটানোর আগে অন্য দেশকে বাণিজ্যিকভাবে টিকা না দেওয়ার বিষয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের বক্তব্যে এ অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।
রোববার সিরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এবং ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায় যে, তারা এ মুহূর্তে টিকা রপ্তানি করতে পারছে না।
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এ টিকা পাওয়ার ব্যাপারে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার চুক্তি রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী চলতি মাসের শেষদিকে অথবা আগামী মাসের প্রথমদিকে দেশে টিকা আসার কথা।
মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এ টিকার জন্য। এ অবস্থায় সেরাম ইনস্টিটিউটের ওই বক্তব্যের সংবাদে স্বভাবতই দেশে জনমনে এক ধরনের উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আমাদের আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনার টিকার বিষয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তার কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপনও বলেছেন, আগেই চুক্তি হওয়ায় বাংলাদেশের টিকা পেতে সমস্যা হবে না। আরও আশার কথা শুনিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
তিনি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। ভারতে উৎপাদিত টিকা বাংলাদেশ প্রথম থেকেই পাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাদের এসব বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটবে। ভারত বাংলাদেশের কেবল নিকটতম প্রতিবেশীই নয়, বন্ধুরাষ্ট্রও বটে।
সেক্ষেত্রে প্রথম থেকে করোনার টিকা প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে মনে করে দেশবাসী। তদুপরি আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক চেষ্টা জোরদার করা উচিত। প্রয়োজনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নেওয়া যেতে পারে প্রয়াস।
নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও বাংলাদেশ একই সময়ে টিকা পাবে। টিকা পাওয়ার আগে টিকার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। শুরুতে ৫০ লাখ টিকা দেওয়া হবে। এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ছয় মাসে মোট তিন কোটি টিকা দেওয়া হবে। এদিকে গতকাল করোনার টিকা কেনার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন লাভ করেছে।
টিকা কেনা, পরিবহন ও সংরক্ষণ বাবদ খরচ হবে মোট ৪ হাজার ৩১৪ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা। শুধু টিকা কিনতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এ টিকা জনগণকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার টিকা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে এবং এর প্রাপ্তি নিয়ে বিশ্বে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, সেহেতু একাধিক উৎস থেকে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করা উচিত। টিকা প্রাপ্তি নিয়ে সব ধরনের অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তির দ্রুত অবসান হবে, এটাই প্রত্যাশা।