করোনায় আর্থিক মন্দায় ভারত, লকডাউনের ধাক্কা উঠতে পারেনি ভারত।করোনাভাইরাসের কারণে প্রথমদিকে দেশজুড়ে কয়েক দফা লকডাউনের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি ভারত। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি ২৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদদের মতে, পরের ত্রৈমাসিকেও অর্থনীতি ৮ দশমিক ৬ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে।
পর পর দু’টি ত্রৈমাসিকে জিডিপি-র সঙ্কোচন হলেই অর্থনীতির পরিভাষায় মন্দা এসেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে ইতিহাসে এই প্রথম ভারতে আর্থিক মন্দা দেখা দিল। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, অক্টোবর-জানুয়ারির তৃতীয় ত্রৈমাসিক থেকেই আর্থিক বৃদ্ধি দেখা যাবে।
আর্থিক মন্দা কাটাতে প্রায় ২.৬৫ লাখ কোটি টাকার ১২ দফার পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন নির্মলা। এতে মূলত শহরে নতুন কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করা হবে। বেসরকারি সংস্থাকে নতুন কর্মী নিয়োগে উৎসাহ দিতে বলা হয়েছে। ১৫ হাজার টাকার কম বেতনের নতুন কর্মী নিযুক্ত হলে বা লকডাউনে কাজ যাওয়া কর্মীরা ফের কাজে যোগ দিলে আগামী দু’বছর প্রভিডেন্ট ফান্ডে কর্মীদের প্রদেয় টাকা সরকারই দিয়ে দেবে।
কোনও সংস্থায় কর্মীর সংখ্যা এক হাজারের কম হলে সংস্থার দেয়া অংশও কেন্দ্র জমা করবে। সরকারি হিসেবে দেশে এমন সংস্থাই ৯৯ শতাংশের বেশি। এ ধরনের পদক্ষেপের সুবাদে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে দাবি করেছেন নির্মলা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ কর্মসংস্থান তৈরিতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে, নগদের জোগান বাড়াতে, উৎপাদন বৃদ্ধিতে, আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করতে এবং চাষিদের পক্ষে সহায়ক হবে। শিল্পমহলও এই দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ক্ষোভ, তাদের জন্য কিছুই করা হচ্ছে না।
আরো পড়ুন
লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবি, ৭৪ শরণার্থীর মৃত্যু
ছোট-মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিআইএর আহ্বায়ক কে ই রঘুনাথনের মতে, কোনও সংস্থা প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা করতে পারছে না বলে কর্মী ছাঁটাই করেছে, এই ধারণাটাই ভুল। শুধু পিএফের টাকা দিলে নতুন চাকরি হবে না। তার বক্তব্য, মধ্যবিত্ত, পেশাদার, ছোট-মাঝারি সংস্থা, পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য এগুলো সব সমস্যার সমাধান হবে না।
গ্রামে ফেরা শ্রমিকদের রোজগারের ব্যবস্থা করতে আরও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আবাসন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে নতুন ফ্ল্যাট কেনায় কিছু বাড়তি আয়কর ছাড়ের ঘোষণা হয়েছে। পরিকাঠামো ও রফতানি ক্ষেত্রকেও চাঙ্গা করার রাস্তা খুঁজছেন অর্থমন্ত্রী।
লকডাউনে মুখ থুবড়ে পড়া শিল্প সংস্থাগুলোর জন্য বন্ধক ছাড়াই ঋণ গ্যারান্টির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সমস্যায় পড়া ২৬টি ক্ষেত্রের ছোট-মাঝারি শিল্পকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী যে ২ দশমিক ৬৫ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে শিল্পে উৎপাদন বাড়াতে ১.৪৬ লাখ কোটি টাকার উৎসাহ ভাতা বুধবারই ঘোষণা করা হয়েছিল। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার ২.৬৫ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছে ঠিকই, তবে এর অর্ধেকের বেশি আগামী পাঁচ বছর ধরে খরচ হবে।
লকডাউনে রাজস্ব আয় কমায় কোষাগারের অবস্থা ভালো নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, ঋণ করেই অর্থনীতিতে টাকা ঢালতে হবে। এর ধাক্কায় রাজকোষের ঘাটতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, তা নিয়ে অর্থমন্ত্রী মুখ খুলতে চাননি। তার দাবি, এখনও পর্যন্ত মোট অর্থের পরিমাণ ২৯ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা জিডিপির ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারের ঘর থেকেই ৯ ভাগ টাকা খরচ হচ্ছে।