কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ই-কমার্সভিত্তিক কম্পানি ইভ্যালি তাদের কার্যক্রম সচল রেখেছিল। গত মাসে হঠাৎ ইভ্যালি তাদের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়। এরপর কম্পানিটি থেকে জানানো হয়, করোনার কারণে তাদের সব কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে।
গত ১১ আগস্ট দেশজুড়ে লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও ইভ্যালির ‘লকডাউন’ এখনো শেষ হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ধানমণ্ডির প্রধান কার্যালয়টি ছিল বন্ধ। কর্তব্যরত কেয়ারটেকারের কাছে ইভ্যালির কার্যালয় বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কম্পানি থেকে কার্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে খুলবে তা আমি বলতে পারব না। এগুলো ওপরের কর্তাদের বিষয়।’
গত রবিবার রাতে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী রবিবার (২২ আগস্ট) থেকে ইভ্যালি অফিস সম্পূর্ণভাবে খোলা থাকবে। সরাসরি কাস্টমার সার্ভিসের জন্য অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। এসংক্রান্ত বিস্তারিত জানানো হবে। ইনশাআল্লাহ পূর্ণ শক্তিতে ইভ্যালির কার্যক্রম চলতে থাকবে।’
এক প্রতিবেদক টানা তিন দিন প্রায় দুই ঘণ্টা করে ইভ্যালির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেন। প্রতিদিন দুই ঘণ্টায় অসংখ্য গ্রাহক কার্যালয়টিতে আসতে দেখেন। কার্যালয়ে তালা থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যান গ্রাহকরা।
এঁদের মধ্যেই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র তানভীর। থাকেন রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায়। গত ৯ জানুয়ারি তিনি ইভ্যালিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার কয়েকটি বাইক অর্ডার করেছিলেন। কম্পানিটি ৪৫ দিনের মধ্যে বাইক বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বললেও তানভীর এখনো সেগুলো হাতে পাননি। তাঁর ইভিএল নম্বর ৫৫৬৬৮৩৬১৮। তিনি বলেন, ‘আমার অর্ডারটি রিফান্ড করা হয়। পরে ইভ্যালির গাবতলী অফিস থেকে মিডল্যান্ড ব্যাংকের চেক নিয়েছিলাম। এরপর টাকা তুলতে গিয়ে দেখি ইভ্যালির ওই হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত টাকা নেই। শেষ চার মাসে এ কার্যালয়ে ৫০ বারের মতো এসেছি। আজকে (১৪ আগস্ট) এসে দেখি অফিস বন্ধ। লকডাউন শেষ হয়েছে, তার পরও অফিস বন্ধ কেন?’ তিনি বলেন, “কাস্টমার কেয়ারে জানালেও একই কথা বলে তারা। বলে, ‘পণ্য পেয়ে যাবেন, কার্যক্রমে চলছে।’ এরপর আর কোনো সাড়া নেই তাদের।”
একটি বেসরকারি কনসালট্যান্সি ফার্মে চাকরি করেন ফাদিয়া রাফিয়া রাফা। গত ৩০ অক্টোবর ইভ্যালি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কক্সবাজারে রয়েল টিউলিপ রিসোর্টে একটি রুম বুক করেছিলেন। এ জন্য তিনি ছয় হাজার ৬৪১ টাকা দেন। তাঁর ইভিএল নম্বর ১৫৩৯৯৫৪৯৭। এক মাস পর ইভ্যালি থেকে কল করে তাঁকে জানানো হয়, হোটেলটিতে সেই রুম বুক করার অফারটি আর নেই। অথচ অ্যাপে লেখা দেখাচ্ছিল সেখানে রুম আছে। এরপর তিনি টাকা ফেরত পেতে দুই মাস ইভ্যালি অফিসে ঘুরেও পাননি। ফাদিয়া রাফা বলেন, ‘দুই মাস ধরে ইভ্যালিতে কল করছি, কিন্তু আমার কল রিসিভ করে না। পরে কাস্টমার কেয়ার থেকে জানায় যে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।’
সাজ্জাদ হোসেন কাজ করেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে। ইভিএল নম্বর ৩৪২৩১২৯০৯। এপ্রিল ও মে মাসে ১০ হাজার টাকার বাটা গিফট কার্ডের অর্ডার করেছিলেন। আগস্টের মাঝামাঝি এসেও এখনো সেই গিফট কার্ড তিনি পাননি। সাজ্জাদ বলেন, ‘কাস্টমার কেয়ারে খুদে বার্তা দিয়েছিলাম, কোনো সাড়া পাইনি। ফেসবুকে ইভ্যালির একটি গ্রুপেও কমেন্ট করেছিলাম, সেখান থেকেও কোনো রকমের সাড়া পাওয়া যায়নি।’
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন হোসেন গতকাল ইভ্যালির কার্যালয়ে আসেন। আক্ষেপের সুরে তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকার চাল, সাবান, তেলসহ আরো বেশ কয়েকটি পণ্য অর্ডার করেছিলেন তিনি। আগস্ট চলছে, অথচ পণ্যগুলো হাতে পাননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা শাহিন হোসেন এক লাখ টাকার পণ্য অর্ডার করেছিলেন। তিন মাস পার হলেও কম্পানি থেকে কোনো পণ্য এখনো পাননি। শাহিন জানান, কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করতে এসেছিলেন। তবে ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে কেউ নেই। সোহেল হোসেন ১৪ আগস্ট দুপুরে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে এসেছিলেন তাঁর পণ্য নেওয়ার জন্য। এসে দেখেন ইভ্যালি অফিস বন্ধ।
চাঁদপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোহেল। ইভ্যালিতে ৬০ হাজার টাকার পণ্য অর্ডার করেছিলেন তিনি। ১৪ আগস্ট ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে এসে দেখেন বন্ধ। তিনি বলেন, পণ্য দেয় না, আবার রিফান্ডও করে না। আর কার্যালয় বন্ধ থাকবে কেন? কোনো জবাবদিহি নেই।
গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে গত রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।