জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা।।
কুমিল্লার -৪ দেবিদ্বারের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের এলাকার ভোট কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। দুইবারের এমপির কেন্দ্র নিয়ে এমন বিতর্কে নেটিজেনদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জাল ভোট দেয়ার এসব অভিযোগ কুমিলা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকার পরাজিত প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বিরুদ্ধে। তার ইউনিয়নেই এসব ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় এক প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল দেবিদ্বার উপজেলার গুণাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের বনকোট এলাকার বাসিন্দা। তার বাড়ির অদূরের বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র আছে। যেগুলোর সবকটিতেই অতীতের সকল নির্বাচনে বিপুল ভোট কাটার অভিযোগ উঠে। তার বাড়ির পাশের বনকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদ্মকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুণাইঘর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুণাইঘর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে ভোট কারচুপির প্রমাণ বহণ করে নির্বাচনের ফলফলের শিটগুলো।
ফলাফলের শিটে দেখা যায়, এমপির বাড়ির কাছের কেন্দ্র বনকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪৭৫ ভোটারের মধ্যে নৌকা একাই পেয়েছে ১২৩৭ ভোট। এই কেন্দ্রের ভোটার ও এমপি রাজী ফখরুলের চাচা জাল ভোট দেয়ার ঘটনা তিনি নিজেই ভিডিওতে প্রকাশ করেন। যা দেশব্যাপী ভাইরাল। এই কেন্দ্রে জয়ী স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন মাত্র ২ ভোট। যা এই উপজেলার সকল কেন্দ্রের সবচেয়ে কম পাওয়া ভোট।
২০২১ সালের উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে তৎকালীন নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান ঈগলের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পেয়েছিলেন ১৬ ভোট। কিন্তু রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের চাচা এএফএম তারেক মুন্সি ধানের শীষ প্রতীকে অলৌকিকভাবে পেয়েছিলেন ৯৮১ ভোট। এর আগের কোন নির্বাচনে ধানের শীষের কেউ এত বেশি ব্যবধানের ভোট নিতে পারেনি।
বনকোটের পাশের আরেকটি আলোচিত কেন্দ্র পদ্মকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রের পাশে রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সমর্থক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী মাস্টারের বাড়ি। তার বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। এই কেন্দ্রের সিল মারা একটি ব্যালট বইয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রেহেনা আক্তারকে প্রত্যাহার করা হয়। এবং সিলমারা ব্যালট গুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই কেন্দ্রে আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন ৪৩৭ ভোট। অথচ নৌকা পেয়েছে ১৩৮৭ ভোট।
গুণাইঘর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুণাইঘর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও অতীতের নির্বাচন গুলিতেও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। উপযুক্ত প্রমাণের দোহাই দিয়ে এসব ঘটনার বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সংসদ সদস্যের বাড়ির আশপাশের কোন কেন্দ্রেই তার বিরুদ্ধে গিয়ে কোন প্রার্থী ভোট পায়নি। অথচ তার সমর্থিত বিএনপি বা আওয়ামী লীগ যেই দলেরই হোক সেই প্রার্থীই বিপুল ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে মো. আবুল কালাম আজাদ ৯৬ হাজার ৮০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। রাজী মোহাম্মদ ফখরুল পেয়েছেন ৮১ হাজার ২৫৭ ভোট।
দৈনিক আস্থা /মুন্না