আস্থা ডেস্ক : ৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের পর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও কূটনীতিকরা। গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পৃথক এসব বৈঠকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দলটির অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন।
এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, দল ঘোষিত ৩১ দফার ওপর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বিএনপির বর্তমান অবস্থান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে জাতীয় সরকার ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত করাসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা স্থান পায়। অনেক দেশই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা দেখিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নসহ একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহের কথাও জানিয়েছে।
সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের ১৩ জুলাই ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে বিএনপি, যা ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার পাশাপাশি প্রশংসাও পায়। ফের নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের বিষয়টি। এখন রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের সেই ৩১ দফা শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ না রেখে তার অর্থবহ বাস্তবায়নও চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের বিভিন্ন ফোরামে কথা বলছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
পাশাপাশি নানাভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও রাষ্ট্র সংস্কারে এই রূপরেখার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করলে সেই ৩১ দফা বাস্তবায়নই হবে মূল লক্ষ্য। কয়েকদিন ধরে দলের ধারাবাহিক মতবিনিময় সভায় জনগণের সমর্থন নিয়ে জাতীয় সরকার ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট সংবিধানে সংযুক্ত, একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়াসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান।
দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তারেক রহমান একজন ডায়নামিক ও আইকনিক নেতা, যা গত ১৬ বছরে তিনি প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার বক্তব্য, কথা বলার ধরন ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিএনপিকে বিশ্বদরবারে উঁচু স্থানে নিয়ে গেছে।
সর্বশেষ গত বুধবার ঢাকা বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন তারেক রহমান। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে গত বছর আন্দোলন চলাকালে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথমে ২৭ দফা এবং পরবর্তী সময়ে ৩১ দফা ঘোষণা করা হয়।
তখন অনেকেরই ধারণা ছিল, এটা কথার কথা। কিন্তু গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর এক নতুন তারেক রহমানকে দেখতে পাচ্ছি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার বক্তব্যে নেতাকর্মীরা মুহূর্তের মধ্যেই শান্ত হয়েছেন। আর কোনো ফ্যাসিবাদ যেন রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দখল করতে না পারে, সেজন্য রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। একপর্যায়ে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে ব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চায় দলটির হাইকমান্ড।
রূপরেখাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩১ দফার প্রতিটি দফা নিয়ে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন করার পরিকল্পনা হয়। পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের এ রূপরেখায় কিছু সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন আছে কি না, সে বিষয়ে পেশাজীবী ও সুধী সমাজের মতামত নেওয়ার চিন্তা করা হয়। যার মুখ্য ভূমিকায় থাকবে দলের মিডিয়া সেল। এসব পরিকল্পনা নিয়ে একাধিকবার মিডিয়া সেলের সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন তারেক রহমান।
জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, দেশের মালিকানা দেশের জনগণের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবার মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছেন।
যেমনটি দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা ঘোষণা করেছিলেন। সবমিলিয়ে ৩১ দফাকে সামনে রেখে এগোলে বাংলাদেশ হবে একটি দৃষ্টান্ত। বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করলে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।