খানসামার আত্রাই নদীর ভাঙনে দুই শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে
নিজামুল ইসলাম/দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের চাকিনীয়া গ্রামে আত্রাই নদীর ভাঙনে প্রায় ২০০ একর আবাদি কৃষি জমি বিলীন হয়ে গেছে এবং হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণে অবস্থিত চাকিনীয়া গ্রামে আত্রাই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল কৃষি জমি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন ভাঙ্গনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর পাশ দিয়ে চলাচলের একমাত্র সড়ক ও বসবাসরত দেড় শতাধিক বাড়ির পরিবারের সবারই চোখে-মুখে যেন দুশ্চিন্তার ছাপ। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
স্থানীয়রা জানান, গত তিন বছর আগে বর্ষাকালে হঠাৎ করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আবাদি জমির ওপর দিয়ে স্রোত যায়। এতে প্রায় আমাদের প্রায় ২০০ একর আবাদী জমি নদীতে পরিণত হয়ে যায়। এরপর গতবছর বর্ষাকালে আবারো প্রায় ১০০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আর এ বছর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একেবারে আমাদের বাড়ির কাছে এসে পৌছেছে। এমনকি নদীর পাশ দিয়ে চলাচলের একমাত্র রাস্তা যেকোন সময় ভেঙে যেতে পারে। বাড়িঘর গুলো নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে ও বাড়িঘর রক্ষার জন্য নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য স্থানীয় লোকজন এমপি ও প্রশাসনকে জানায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন মুঠোফোনে জানান, আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। আমারও ৫ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। নদী ভাঙ্গন রোধে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরামর্শে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা আঃ গনি বলেন, আমার ৩ বিঘা জমি চাষ করে সংসার চলত। এ বছর নদীতে সেই শেষ সম্বল জমি ও গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এখন বাড়ি নিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে রয়েছি।
নদীর পাড়ের আরেক বাসিন্দা আঃ সামাদ জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। এ বছর মনে হয়, আমার বাড়িতে থাকা হবে না। কেমন করে পরিবার নিয়ে থাকবো, সেই চিন্তায় আছি।
দুঃখের সহিত রশিদ মিয়া বলেন, ধীরে ধীরে আত্রাই নদী আমাদের খেয়ে ফেলছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ চাকিনিয়া গ্রামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন বলেন, বিষয়টি আমি গত বছরেই আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে জানিয়েছি। ভাঙন রোধে বড় ধরনের বরাদ্দ দরকার। না হলে আমাদের ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে আমাদের ইউনিয়নটি নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পায়।
এ বিষয়ে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সঞ্জয় কুমার মন্ডল মুঠোফোনে জানান, আমি বিষয়টি আমার হাইকমান্ডকে জানিয়ে আমার লোক ওখানে পাঠাচ্ছি। নদী ভাঙন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।