গঙ্গাচড়ায় পুলিশের চার সদস্যকে মারধরের অভিযোগ, আটক-৩
রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুর জেলার গঙ্গাচড়ায় জমি সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে গিয়ে গ্রামবাসীর হামলার শিকার হয়েছেন চার পুলিশ সদস্য। হামলার শিকার চার জনের মধ্যে রেজা রাব্বি নামে এক উপ-পরিদর্শকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যায় গংগাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের দক্ষিণ পানাপুকুর চৌধুরীহাট দোলাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার (৩ জুন) সকালে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গংগাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এক নারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন-জাকির হোসেন (৩৭), ময়না বেগম (৪০) ও মিরকুলাল (৪৫)। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকার মাহবুবুর রহমান (৭০) উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের দক্ষিণ পানাপুকুর চৌধুরীহাট দোলাপাড়া এলাকার আশরাফুলের (৪০) কাছ থেকে ৭৫ শতক জমি বায়নাপত্র করেন। বায়নাসূত্রে ছয় মাসের মধ্যে জমির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে জমির মালিকের কাছ থেকে দলিল করে নেবেন মাহবুবুর রহমান। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও জমি দলিল করে নিতে ব্যর্থ হন তিনি।
এদিকে জমির মালিক আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার তার জমিতে গাছ লাগাতে গেলে মাহবুবুর থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য অভিযোগের তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় আশরাফুলকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে আসতে চাইলে গ্রামের লোকজন বাধা দেন এবং পুলিশের কাছে থাকা অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালান। এতে চার পুলিশ সদস্য আহত হন।
খবর পেয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করতে গেলে এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে এসময় এক নারীসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
অন্যদিকে আহত রেজা রাব্বি নামে এক উপ-পরিদর্শক গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি তিন পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক প্রীতি সাহা জানান, আহত রেজায়ে রাব্বীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আহত পুলিশ সদস্য মিথুন রায়, ওয়েদুর রহমান ও শরিফুল ইসলামকে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পানাপুকুর গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী নারী রশিদা বেগম অভিযোগ করেন, পুলিশ এসে মহুবারের পক্ষ নিয়ে নিরপরাধ আশরাফুলকে ধরে টেনেহেঁচড়ে গাড়িতে তুললে তাঁরা বাধা দেন। পুলিশ তখন উপস্থিত লোকজনকে মারপিট করতে থাকেন। গ্রামের লোকজনও ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে আটক করেন। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং পুলিশের একটি ওয়ারলেস সেট সেখানে পেয়ে লোকজন স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। ঘটনার পর পুলিশি আতঙ্কে এলাকার অনেকে বাড়ি ছেড়েছেন।
গংগাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল হোসেন সাংবাদিককে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান।
এ বিষয়ে শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান মুঠোফোনে জানান, ওই ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনাস্থলে পুলিশ কোনো গুলি ছোড়েনি।