ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথ্রাস জেলায় গণধর্ষণের শিকার হয়ে ১৯ বছরের এক নারী মারা গেছেন। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
এর আগে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারী দিল্লির একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশে ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ধর্ষণের শিকার নারীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ওই নৃশংশ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় গণমাধ্যমকে পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত চারজন ওই নারীকে জোরপূর্বক পাশের একটি মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে তার ওপর হামলে পড়ে তারা। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন ওই নারী।
ভুক্তভোগীর ভাই বিবিসি হিন্দিকে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার ১০ দিনের মধ্যে কাউকে আটক করা হয়নি। ১৪দিন লড়াই করে ওই নারী জীবনযুদ্ধে হেরে যান বলেও জানান তার ভাই
ভুক্তভোগীর পরিবার জানিয়েছে, প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই এলাকায় দলিত শ্রেণির মানুষের ওপর অব্যাহতভাবে অত্যাচার করে আসছিল। নানাভাবে সে তাদের বিরক্ত করতো বলেও অভিযোগ বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুনঃ বিজেপি সরকারের প্রতিহিংসায় অ্যামনেস্টির কার্যক্রম স্থগিত
দলিতরাজনীতিবিদ উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রী মায়াবতী এক টুইটে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেন, সরকারের উচিৎ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া। দ্রুত বিচারিক আদালতে অভিযুক্তদের কঠোর সাজা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
সাবেক মুখমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে বর্তমান রাজ্য সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারা নারীদের অধিকারের বিষয়ে বরাবরই উদাসীন।
দলিতরাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী চন্দ্রশেখর আজদা গেলো সপ্তাহে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ধর্ষণের শিকার নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তার দল।
ভারতে হিন্দু বর্ণবাদের কারণে দলিতদের নিম্ন শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তা সর্বত্র নিন্দনীয় হলেও এটাই ভারতের বাস্তবতা। তাদের রক্ষায় আইন থাকলেও দৈনন্দিন জীবনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশটিতে প্রায় ২ কোটি দলিত শ্রেণির মানুষ রয়েছে।
দলিতনারী ধর্ষণ এবং তার মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। একে ২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্তবাসে ধর্ষণের শিকার নির্ভয়াকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেকে। দিল্লির ওই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
২৩ বছর বয়সী ফিজিওথেরাপির শিক্ষার্থী নির্ভয়া। গণমাধ্যম তাকে এ নামের অভিহিত করে। ভারতীয় আইনের অধীনে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
২০১২ সালের দিল্লির ঘটনার পর ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতা ভারতে সবেচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। ওই ঘটনায় পর ব্যাপক বিক্ষোভ হয় ভারতজুড়ে। পরিবর্তন করা হয় ধর্ষণের শাস্তি আইন। তারপরও নারী এবং কন্যাসন্তানের ওপর দেশটিতে সহিংসতার পরিমাণ কমেনি বরং বেড়েছে।