ঢাকা ০১:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo আবার মাইনাস তৎপরতায় ডিপ স্টেট: মাসুদ কামাল Logo বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপি নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র Logo পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন Logo পানছড়িতে অবৈধ কাঠ আটক করেছে বিজিবি Logo পানছড়িতে সেনাবাহিনীর মতবিনিময়, উপহার ও চিকিৎসা সেবা প্রদান Logo কিশোরগঞ্জে রওজা মনি হত্যার বিচার দাবিতে গ্রামবাসীর মানববন্ধন Logo ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে রেজাউল করিম খান চুন্নুর সমর্থকদের গণমিছিল Logo পানছড়িতে শিক্ষার্থীর হাতে ওয়াদুদ ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের অনুদান তুলে দিলো স্বেচ্ছা সেবক দল Logo পানছড়িতে অসহায়, গরীব ও দুস্থের মাঝে ৩ বিজিবির মানবিক সহায়তা বিতরণ Logo সীমান্ত কার্যক্রম নিয়ে প্রেস বিফ্রিং করেছে পানছড়ি বিজিবি

চট্টগ্রামের জশনে জুলুস আজ

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ১২:২৭:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৪৮৬ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রামের জশনে জুলুস আজ

রানা সাত্তার/চট্টগ্রামঃ

প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল এলেই ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা’ ধ্বনি আর নবীপ্রেমিকদের পদভাবে মুখরিত হয়ে ওঠে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাজপথ। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পৃথিবীতে শুভাগমনের এই দিনটির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে চট্টগ্রামের জশনে জুলুস। এই জুলুসকে কেন্দ্র করে পুরো নগরী পরিণত হয় নবীপ্রেমিকদের মিলনমেলায়।

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম-এর ব্যবস্থাপনায় এবার আয়োজন হচ্ছে ৫৪তম জশনে জুলুসের। এবারের জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন পাকিস্তানের দরবারে সিরিকোটের সাজ্জাদনশীন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ।

আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টায় ষোলশহরের আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড় হয়ে পুনরায় একই রুটে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মাহফিল ও জোহর নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে জুলুসের সমাপ্তি হবে। এবারের জুলুসে অর্ধ কোটি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বরাবরের মতো জশনে জুলুস এবারও জনসমুদ্রে রূপ নেবে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে ইতিমধ্যে আলোচিত এই জুলুসকে এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই এর শরিয়তসম্মত নির্মলিন ঐতিহ্য রক্ষা করাও আমাদের সবার দায়িত্ব।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনের ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, হিজরি ১৩৯৪ সালে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের কোরবানিগঞ্জ বলুয়ারদীঘি পাড়ের খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে জশনে জুলুসের সূচনা হয়। কাদেরিয়া তরিকার অন্যতম দিকপাল আল্লামা হাফেজ ক্বারি সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহের নির্দেশনা অনুসারে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় দেশের প্রথম  জশনে জুলুসের নেতৃত্ব দেন আনজুমানের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ নূর মোহাম্মদ আল কাদেরী। ১৯৭৬ সালে (১৩৯৬ হিজরি) আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং তিনি নিজেই চট্টগ্রামে ১২ রবিউল আউয়ালের জুলুসে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তার নেতৃত্বেই চট্টগ্রামে এই জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাতেও প্রতি বছর ৯ রবিউল আউয়াল জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে তার পুত্র আল্লামা তাহের শাহ দীর্ঘদিন এই জুলুসের নেতৃত্ব দেন। সুন্নি মুসলমানদের কাছে এ জুলুস অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রতিবছর জুলুসে মানুষের অংশগ্রহণ ও উপস্থিতি বাড়ছে। আনজুমান ট্রাস্টের প্রবর্তিত এই জশনে জুলুসের অনুসরণে বর্তমানে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, খানকাহ, দরবার ও সংগঠন রবিউল আউয়াল মাসে বের করে আসছে শত শত জশনে জুলুস।

প্রথম দিকে বলুয়ারদীঘির পাড় খানকাহ থেকে বের হয়ে জুলুস নগরীর লালদীঘি, নিউ মার্কেট, দারোগাহাট, মাঝিরঘাট, বারিক বিল্ডিং মোড়, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ান হাট, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে মাহফিলের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হতো। পরে জুলুস শুরুর স্থান পরিবর্তন করে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া সংলগ্ন আলমগীর খানকা করা হয়। সেখান থেকে শুরু হওয়া জুলুস মুরাদপুর, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালি, নিউ মার্কেট, কদমতলী, দেওয়ানহাট, টাইগার পাস, ওয়াসা, জিইসি, মুরাদপুর হয়ে পুনরায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ায় গিয়ে শেষ হতো।

ট্যাগস :

চট্টগ্রামের জশনে জুলুস আজ

আপডেট সময় : ১২:২৭:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামের জশনে জুলুস আজ

রানা সাত্তার/চট্টগ্রামঃ

প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল এলেই ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা’ ধ্বনি আর নবীপ্রেমিকদের পদভাবে মুখরিত হয়ে ওঠে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাজপথ। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পৃথিবীতে শুভাগমনের এই দিনটির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে চট্টগ্রামের জশনে জুলুস। এই জুলুসকে কেন্দ্র করে পুরো নগরী পরিণত হয় নবীপ্রেমিকদের মিলনমেলায়।

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম-এর ব্যবস্থাপনায় এবার আয়োজন হচ্ছে ৫৪তম জশনে জুলুসের। এবারের জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন পাকিস্তানের দরবারে সিরিকোটের সাজ্জাদনশীন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ।

আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টায় ষোলশহরের আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড় হয়ে পুনরায় একই রুটে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে মাহফিল ও জোহর নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে জুলুসের সমাপ্তি হবে। এবারের জুলুসে অর্ধ কোটি মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।

আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বরাবরের মতো জশনে জুলুস এবারও জনসমুদ্রে রূপ নেবে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে ইতিমধ্যে আলোচিত এই জুলুসকে এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই এর শরিয়তসম্মত নির্মলিন ঐতিহ্য রক্ষা করাও আমাদের সবার দায়িত্ব।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনের ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, হিজরি ১৩৯৪ সালে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের কোরবানিগঞ্জ বলুয়ারদীঘি পাড়ের খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে জশনে জুলুসের সূচনা হয়। কাদেরিয়া তরিকার অন্যতম দিকপাল আল্লামা হাফেজ ক্বারি সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহের নির্দেশনা অনুসারে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় দেশের প্রথম  জশনে জুলুসের নেতৃত্ব দেন আনজুমানের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ নূর মোহাম্মদ আল কাদেরী। ১৯৭৬ সালে (১৩৯৬ হিজরি) আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং তিনি নিজেই চট্টগ্রামে ১২ রবিউল আউয়ালের জুলুসে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তার নেতৃত্বেই চট্টগ্রামে এই জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাতেও প্রতি বছর ৯ রবিউল আউয়াল জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে তার পুত্র আল্লামা তাহের শাহ দীর্ঘদিন এই জুলুসের নেতৃত্ব দেন। সুন্নি মুসলমানদের কাছে এ জুলুস অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রতিবছর জুলুসে মানুষের অংশগ্রহণ ও উপস্থিতি বাড়ছে। আনজুমান ট্রাস্টের প্রবর্তিত এই জশনে জুলুসের অনুসরণে বর্তমানে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, খানকাহ, দরবার ও সংগঠন রবিউল আউয়াল মাসে বের করে আসছে শত শত জশনে জুলুস।

প্রথম দিকে বলুয়ারদীঘির পাড় খানকাহ থেকে বের হয়ে জুলুস নগরীর লালদীঘি, নিউ মার্কেট, দারোগাহাট, মাঝিরঘাট, বারিক বিল্ডিং মোড়, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ান হাট, ওয়াসার মোড়, জিইসি মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে মাহফিলের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হতো। পরে জুলুস শুরুর স্থান পরিবর্তন করে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া সংলগ্ন আলমগীর খানকা করা হয়। সেখান থেকে শুরু হওয়া জুলুস মুরাদপুর, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালি, নিউ মার্কেট, কদমতলী, দেওয়ানহাট, টাইগার পাস, ওয়াসা, জিইসি, মুরাদপুর হয়ে পুনরায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ায় গিয়ে শেষ হতো।